সোমবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২১

ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম

 🌼পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেন আমরা পালন করি🌼

🌸রাসূল (ﷺ) মিলাদুন্নবী (ﷺ) পালন করার ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন। হাদিস শরীফটি হলো নিম্নরূপঃ

عَنْ أَبِي قَتَادَةَ الْأَنْصَارِيِّ، رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُئِلَ عَنْ صَوْمِ الِاثْنَيْنِ؟ فَقَالَ: فِيهِ وُلِدْتُ - 


(৯)-‘‘হযরত আবু কাতাদাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বর্ণনা করেন, রাসূলে করিম (ﷺ) কে সোমবার রোযা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, তার উত্তরে রাসূলে করিম ((ﷺ)) বললেন “এ দিন আমার মিলাদুন্নবী (ﷺ) অর্থাৎ এ দিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি।’’

🔺(মেশকাত শরীফ- ১৭৯ পৃ; মুসলিম শরীফ- ১/৩৬৮ পৃ.)


 আলোচ্য হাদিস শরীফের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো রাসূল (ﷺ) শোকরিয়া স্বরূপ রোজা রেখে সাপ্তাহিক মিলাদুন্নবী (ﷺ) পালন করেছেন।

━━━━━━━━━━━━━━━━

🌼ওলামায়ে উম্মতের কওল ও আমলের আলোকে মীলাদুন্নবী (ﷺ)


১. মুহাদ্দিস ইমাম ইবনুল জাওযী (رحمة الله) 🔺(ওফাত. ৫৯৭ হি.) বলেন- 


لا زال أهل الحرمين الشريفين والمصر واليمن والشام وسائر بلاد العرب من المشرق والمغرب يحتفلون بمجلس مولد النبى صلى الله عليه وسلم ويفرحون بقدومه هلال شهر ربيع الأول و يهتمون اهتماما بليغا على السماع والقراءة لمولد النبى صلى الله عليه وسلم وينالون بذلك أجرا جزيلا وفوزا عظيما- 


“মক্কা, মদীনা, ইয়ামন, শাম ও তামাম ইসলামী বিশ্বের পূর্ব ও পশ্চিমবাসীরা সবসময় হুজুর (ﷺ) এর বেলাদাত শরীফের ঘটনায় মীলাদ মাহফিল আয়োজন করত। তারা রবিউল আউয়াল মাসের নতুন চাঁদ উদিত হলে খুশি হয়ে যেত এবং হুজুরের মিলাদ শুনা ব্যাপারে ও পড়ার সীমাহীন গুরুত্বারোপ করত। আর মুসলমানগণ এসব মাহফিল কায়েম করে পরিপূর্ণ প্রতিদান ও আধ্যত্মিক কামিয়াবী হাছিল করত।” 

🔺(ইমাম যওজী, বয়ানুল মিলাদুন্নবী- ৫৮ পৃ.)


৩. ইমামুল হাফেজ সাখাভী (رحمة الله) বলেন-


لا زال أهل الإسلام في سائر الأقطار والمدن الكبار يحتفلون في شهر مولده صلى الله عليه وسلم بعمل الولائم البديعة المشتملة 

-“বিশ্বের চতুর্দিকে ও শহরগুলোতে হুজুর (ﷺ) এর জন্ম গ্রহণের মাসে মুসলমানরা বড় বড় আনন্দনুষ্ঠান করে থাকে।” 

🔺(মোল্লা আলী ক্বারী, মাওয়ারিদুর রাবী, ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ১/ ৩৬২ পৃ. )

৪. ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ূতী (رحمة الله) বলেন- 

عِنْدِي أَنَّ أَصْلَ عَمَلِ الْمَوْلِدِ الَّذِي هُوَ اجْتِمَاعُ النَّاسِ وَقِرَاءَةُ مَا تَيَسَّرَ مِنَ الْقُرْآنِ وَرِوَايَةُ الْأَخْبَارِ الْوَارِدَةِ فِي مَبْدَأِ أَمْرِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَا وَقَعَ فِي مَوْلِدِهِ مِنَ الْآيَاتِ، ثُمَّ يُمَدُّ لَهُمْ سِمَاطٌ يَأْكُلُونَهُ وَيَنْصَرِفُونَ مِنْ غَيْرِ زِيَادَةٍ عَلَى ذَلِكَ - هُوَ مِنَ الْبِدَعِ الْحَسَنَةِ الَّتِي يُثَابُ عَلَيْهَا صَاحِبُهَا لِمَا فِيهِ مِنْ تَعْظِيمِ قَدْرِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَإِظْهَارِ الْفَرَحِ وَالِاسْتِبْشَارِ بِمَوْلِدِهِ 


-“আমার মতে মিলাদের জন্য সমাবেশ করা, তেলাওয়াতে কোরআন, হুজুর (ﷺ) এর পবিত্র জীবনের বিভিন্ন ঘটনাবলী এবং জন্ম গ্রহণকালীন গঠিত নানান আলামত সমূহের আলোচনা করা এমন বেদআতে হাছানার অন্তর্ভুক্ত; যে সব কাজের ছওয়াব দেয়া হয়। কেননা এতে হুজুর (ﷺ) এর তা’জিম, মোহাব্বত এবং তাঁর আগমনের খুশী জাহির করা হয়।”

🔺(ইমাম সুয়ূতি, আল-হাভীলিল ফাতওয়া, ১/২২১পৃ.)


৫. ইমাম হাফেজ ইবনে হাজর মক্কী (رحمة الله) বলেন- 


الموالد والأذكار الَّتِي تفعل عندنَا أَكْثَرهَا مُشْتَمل على خير، كصدقة، وَذكر، وَصَلَاة وَسَلام على رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم


-“আমাদের এখানে মিলাদ মাহফিল জিকর-আজকার যা কিছু অনুষ্ঠিত হয়, তার অধিকাংশই ভাল কাজের অন্তর্ভুক্ত। যেমন, সাদকা করা, জিকির করা, দরুদ পড়া, ও রাসূলে পাক (ﷺ) এর উপর ছালাম পেশ করা।”

🔺(ইবনে হাজার মক্কী, ফাতওয়া হাদিসিয়্যাহ, ১/১০৯ পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।)


৬. বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা ইমাম কুস্তালানী (رحمة الله) লিখেন-


ولا زال أهل الاسلام يحتفلون بشهر مولوده صلى الله عليه وسلم ويعملون الولائم ويتصد قون فى لياليه بانواع الصدقات ويظهرون السرور ويزيدون فى المبرات ويعتنون بقرأة مولده الكريم ويظهر عليهم من بركاته كل فضل عميم – 


-‘‘প্রতিটি যুগে মুসলমানগণ নবী করীম (ﷺ) এর বেলাদাত শরীফের মাসে মীলাদ মাহফিলের আয়োজন করে আসছে, উন্নত মানের খাবারের আয়োজন করেন, এর রাতগুলোতে বিভিন্ন ধরণের সাদক্বাহ খায়রাত করেন, আনন্দ প্রকাশ করতে থাকেন, পুন্যময় কাজ বেশি পরিমাণে করার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে আসেন। ফলে আল্লাহর অসংখ্য বরকত ও ব্যাপক অনুগ্রহ প্রকাশ পায়।’’

🔺(আল্লামা ইমাম যুরকানী : শরহুল মাওয়াহেব : ১ম খন্ড : ২৬২ পৃষ্ঠা)


৭. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেন-


لازال اهل الاسلام يختلفون فى كل سنة جديدة ويعتنون بقراءة مولده الكريم ويظهر عليهم من بركاته كل فضل عظيم.


-‘‘মুসলমানগণ প্রতি নববর্ষে মাহফিল করে আসছেন এবং তাঁরা মীলাদ পাঠের আয়োজন করেন। এর ফলে তাদের প্রতি অসীম রহমতের প্রকাশ ঘটে।’’

🔺(মোল্লা আলী ক্বারী, মাওয়ারিদুর রাভী, ৫ পৃ. )

তাফসীরে রুহুল বায়ান প্রণেতা আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) বলেন-


ومن تعظيمه عمل المولد إذا لم يكن فيه منكر قال الامام السيوطي قدس سره يستحب لنا اظهار الشكر لمولده عليه السلام


-‘‘মীলাদ শরীফ করাটা হুযুর (ﷺ)-এর প্রতি সম্মান, যদি এটা মন্দ কথা বার্তা থেকে মুক্ত হয়। ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) বলেন, হুযুর (ﷺ)-এর বেলাদাতের শুকরিয়া জ্ঞাপন করা আমাদের জন্য মুস্তাহাব।’’

🔺(ইসমাঈল হাক্কী, রুহুল বায়ান, ৯/৫৬পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।)


৯. শায়খ আব্দুল হক মোহাদ্দেসে দেহলভী (رحمة الله) বলেন- 


لا يزال اهل الاسلام يحتفلون بشهر مولده صلى الله عليه وسلم ويعملون الولائم ويتصدقون فى لياليه بانواع الصدقات ويظهرون السرور ويزيدون فى المبرات ويعتنون بقراء مولده الكريم- 


-“হুজুর (ﷺ) এর পবিত্র বেলাদতের মাসে মিলাদ-মাহফিলের আয়োজন সমগ্র মুসলিম বিশ্বে সর্বদাই পালিত হয়ে আসছে। ঐ মাসের রাত্রিতে দান ছদকা করে, আনন্দ প্রকাশ করে এবং ঐ স্থানে বিশেষভাবে নবীর আগমনের উপর প্রকাশিত বিভিন্ন ঘটনাবলীর বর্ণনা করা মুসলমানদের বিশেষ আমল সমূহের অন্তর্ভুক্ত।”

🔺(শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী, মা সাবাতা বিসুন্নাহ, ৬০পৃ.)


১০. শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ্ মোহাদ্দেসে দেহলভী (رحمة الله) বলেন- 


وكنت قبل ذالك بمكة المعظمة فى مولد النبى صلى الله عليه وسلم فى يوم ولادته والناس يصلون على النبى صلى الله عليه وسلم - 


-“মক্কা মোয়াজ্জামায় হুজুর (ﷺ) এর বেলাদত শরীফের দিন আমি এমন একটি মিলাদ মাহফিলে শরীক হয়েছিলাম, যাতে লোকেরা হুজুরের দরগাহে দুরূদ-ছালাতের হাদিয়া পেশ করছিল।”

🔺(শাহ ওয়ালী উল্লাহ দেহলভী, ফয়জুল হারামাঈন, ৮০-৮১পৃ.)


১১. অন্যত্র তিনি স্বীয় পিতা হযরত শাহ্ আব্দুর রহীম দেহলভী (رحمة الله) এর সূত্রে উল্লেখ করে বলেন- 


كنت اصنع في أيام المولد طعاما صلة بالنبي صلى الله عليه وسلم فلم يفتح لي سنة من السنين شئ اصنع به طعاما فلم اجد الا حمصا مقليا فقسمته بين الناس فرأيته صلى الله عليه وسلم بين يديه هذا الحمص مبتهجا وبشاشا- 


-“আমি প্রতি বছর হুজুর (ﷺ) এর মিলাদে মাহফিলে খানার ব্যবস্থা করতাম। কিন্তু এক বছর আমি খাবার যোগাড় করতে পারিনি। তবে কিছু ভুনা করা চনাবুট পেয়েছিলাম। অতঃপর আমি তা মিলাদে আগত মানুষের মধ্যে বন্টন করে দিলাম। পরে আমি স্বপ্নে হুজুর (ﷺ)কে বড়ই খোশ হাসেল তাশরিফ আনতে দেখলাম এবং তার সামনে মওজুদ রয়েছে উক্ত চনাবুট (যা আমি বন্টন করেছিলাম)।”

🔺(শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী, আদ-দুরুরুস সামীন, ৪০পৃ. )


১২. আহলে হাদিসের ইমাম ইবনে তাইমিয়া বলেন-


فتعظيم المولد، واتخاذه موسمًا، قد يفعله بعض الناس، ويكون له فيه أجر عظيم لحسن قصده، وتعظيمه لرسول الله صلى الله عليه وسلم، كما قدمته لك أنه يحسن من بعض الناس، ما يستقبح من المؤمن المسدد.


-“আমি ইতোপূর্বে আলোচনা করছি যে মিলাদকে মানুষেরা মৌসুমীভাবে পালন করে তা’জিম করে থাকে, এতে তাদের অনেক সাওয়াব হবে। আর এটাও সুস্পষ্ট যে, কিছু লোক এটাকে হাসান মনে করে, কারণ সঠিক মু’মিন ব্যক্তি মন্দ কাজ করে না।” 

🔺(ইবনে তাইমিয়া, একতেদ্বাউল সিরাতাল মুস্তাকিম ২/১২৬ পৃ. দারুল আ‘লামুল কিতাব, বয়রুত, লেবানন)


১৩. দেওবন্দীদের পীরানে পীর হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজের মক্কী (رحمة الله) বলেন-  


ہمارے علماء مولد شريف میں بہت تنازعه كرتے ہیں تاہم علماء جواز كى طرف بہى گۓ ہیں - جب صورت جواز كى موجود ہے پہر كيوں ايسا تشدد كر تے ہيں اور ہمارے واسطے اتباع حرمين كافى ہے- 


-“আমাদের আলেমগণ মওলুদ শরীফ নিয়ে অনেক ঝগড়া করে থাকে। এরপরেও আলেমগণ কিন্তু জায়েযের পক্ষে মত ব্যক্ত করেছেন। যখন জায়েযের ছুরত রয়ে গেছে, তো এত বাড়াবাড়ির কি প্রয়োজন। আমাদের জন্য হারামাঈনের অনুসরণ করাই যথেষ্ঠ।”

🔺(হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজেরে মক্কী, কুল্লিয়াতে এমদাদিয়া, ২০৭পৃ. ফয়সালায়ে হাফতে মাসায়েল, ৭-৮ পৃ.)


হযরত হাজী সাহেব (رحمة الله) ফয়সালায়ে হাফতে মাসয়ালা গ্রন্থে নিজের আমলও বর্ণনা করে দিয়েছেন- 


فقير مشرب يہ ہے محفل مولد میں شريك ہوتا بلكہ بركات كا ذريعہ سمجہ كر ہر سال منعقد كرتا ہوں اور قيام میں لطف اور لذت پا ہوں 


-“এই ফকীরের নিয়ম হল এই যে, আমি মওলুদ মাহফিলে অংশ গ্রহণ করি, এমনকি বরকতের ওসিলা মনে করে প্রতি বছর উক্ত অনুষ্ঠান করে থাকি এবং কিয়ামের মধ্যে লুতফ (ভালবাসা) ও লাজ্জাত (স্বাদ) পেয়ে থাকি।” 

🔺(হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজেরে মক্কী, কুল্লিয়াতে এমদাদিয়া, ২০৭ পৃ., ফয়সালায়ে হাফতে মাসায়েল, ৭-৮ পৃ.)

বিঃদ্র=> দেওবন্দীদেরকে বলবো যে নিজের পীরানে পীরকে মানেন না তো কেমন আদব ওয়ালা মুরীদ আপনারা?

      মিলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপনের ফজিলত

         ইমাম হযরত হাসান বছরী (রহঃ)                 

[বিশিষ্ট তাবিয়ী, যিনি শতাধিক সাহাবায়ে কিরাম (রা) গণের সাক্ষাত লাভ করেছিলেন] তিনি বলেন-


قال الحسن البصرى رحمة الله عليه وَدِدْتُّ لَوْ كَانَ لِىْ مِثْلُ جَبَلِ اُحُدٍ ذَهْبًا فَاَنْفَقْتُهٗ عَلٰى قِرَاءَةِ مَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.


অর্থ: ‘আমার একান্ত ইচ্ছা হয় যে, আমার যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ থাকতো তাহলে তা পবিত্র মীলাদুন্নবী (ﷺ) উপলক্ষে ব্যয় করতাম।’সুবহানাল্লাহ!

[আন নি'মাতুল কুবরা আলাল আলাম ৮ পৃষ্ঠা]


ইমাম হযরত ইমাম শাফিয়ী (রহ) বলেন-


قَالَ اَلاِمَامُ الشَّافِعِىُّ رَحِمَهُ اللهُ مَنْ جَمَعَ لِمَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ اِخْوَانًا وَهَيَّاَ طَعَامًا وَاَخْلٰى مَكَانًا وَعَمَلَ اِحْسَانًا وَصَارَ سَبَبًا لِقِرَائَتِهٖ بَعَثَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَعَ الصِّدِّيْقِيْنَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِيْنَ وَيَكُوْنُ فِىْ جَنَّاتِ النَّعِيْمِ.


অর্থ: ‘যে ব্যক্তি পবিত্র মীলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপন উপলক্ষে :

- লোকজন একত্রিত করলো, 

- খানাপিনার ব্যবস্থা করলো,

- জায়গা নির্দিষ্ট করলো এবং 

- এ জন্য উত্তমভাবে তথা সুন্নাহ ভিত্তিক আমল করলো 

- তাহলে উক্ত ব্যক্তিকে আল্লাহ পাক হাশরের দিন ছিদ্দীক্ব, শহীদ ছলিহীনগণের সাথে উঠাবেন এবং উনার ঠিকানা হবে জান্নাতে নায়ীমে।’ সুবহানাল্লাহ!

[আন নি'মাতুল কুবরা আলাল আলাম ১০ পৃষ্ঠা]


হযরত জুনাইদ বাগদাদী (রহ) বলেন-


قال جنيد البغدادى رحمة الله عليه مَنْ حَضَرَ مَوْلِدَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعَظَّمَ قَدَرَهٗ فَقَدْ فَازَ بِالاِيْمَانِ.


অর্থ: “যে ব্যক্তি পবিত্র মীলাদুন্নবী (ﷺ) এর আয়োজনে উপস্থিত হবে এবং উপযুক্ত সম্মান প্রদর্শন করবে সে বেহেশ্তী হবে।” সুবহানাল্লাহ!

[আন নি'মাতুল কুবরা আলাল আলাম ৮ পৃষ্ঠা]


বিখ্যাত ইমাম হযরত ইমাম মারূফ কারখী (রহ) বলেন-


قال المعروف الكرخى رحمة الله عليه مَنْ هَيَّأَ طَعَامًا لاَجْلِ قِرَائَةِ مَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَجَمَعَ اِخْوَانًا وَاَوْقَدَ سِرَاجًا وَلبِسَ جَدِيْدًا وَتَبَخَّرَ وَتَعَطَّرَ تَعْظِيْمًا لِمَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَشَرَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَعَ الْفِرْقَةِ الاُوْلٰى مِنَ النَّبِيّنَ وَكَانَ فِىْ اَعْلٰى عِلِّيِّيْن.


অর্থ: “যে ব্যক্তি পবিত্র ঈদে মীলাদুন্নবী (ﷺ) উপলক্ষে খাদ্যের আয়োজন করে, অতঃপর লোকজনকে জমা করে, মজলিসে আলোর ব্যবস্থা করে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নতুন পোশাক পরিধান করে, সুঘ্রাণ ও সুগন্ধি ব্যবহার করে, আল্লাহ পাক তাকে নবী আলাইহিমুস সালামগণের প্রথম কাতারে হাশর করাবেন এবং সে জান্নাতের সুউচ্চ মাক্বামে অধিষ্ঠিত হবেন।” সুবহানাল্লাহ্!

[আন নি'মাতুল কুবরা আলাল আলাম ৮ পৃষ্ঠা]


ইমাম ফখরুদ্দিন রাজি (রহ) বলেন-


مَا مِنْ شَخْصٍ قَرَاَ مَوْلِدَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلٰى مِلْحٍ اَوْ بُرٍّ اَوْشَىء اٰخَرَ مِنَ الْمَأكُوْلاتِ اِلا ظَهَرَتْ فِيْهِ الْبَركَةُ فِىْ كُلِّ شَىء. وَصَلَ اِِلَيْهِ مِنْ ذٰلِكَ الْمَأكُوْلِ فَاِنَّهٗ يَضْطَرِبُ وَلا يَسْتَقِرُّ حَتى يَغْفِرَ اللهُ لاٰكِلِهٖ.

অর্থ: যে ব্যক্তি পবিত্র মীলাদুন নবী (ﷺ) উদযাপন করে লবণ, গম বা অন্য কোন খাদ্য দ্রব্যের উপর ফুঁক দেয়, তাহলে এই খাদ্য দ্রব্যে অবশ্যই বরকত প্রকাশ পাবে। এভাবে যে কোন কিছুর উপরই পাঠ করুক না কেন, তাতে বরকত হবেই। উক্ত খাদ্য-দ্রব্য মীলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপনকারীর জন্য আল্লাহ পাকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে, এমনকি তাকে ক্ষমা না করা পর্যন্ত সে ক্ষান্ত হয় না।” সুবহানাল্লাহ!

[আন নি'মাতুল কুবরা আলাল আলাম ৯ পৃষ্ঠা]


قال السر سقتى رحمة الله عليه مَنْ قَصَدَ مَوْضعًا يُقْرَأُ فِيْهِ مَوْلِِدُ النَّبِىِّ صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَدْ قَصَدَ رَوْضَةً مِنْ رِيَاضِ الْجَنَّةِ لاَنَّهٗ مَا قَصَدَ ذٰلِكَ الْمَوْضعَ اِلا لِمُحَبَّةِ النَّبِىِّ صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.


অর্থ: “যে ব্যক্তি পবিত্র মীলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপন করার জন্য স্থান নির্দিষ্ট করলো সে যেন নিজের জন্য জান্নাতে একটি বাগান নির্দিষ্ট করলো। কেননা সে তা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক (ﷺ) উনার মুহব্বতের জন্যই করেছে। আর রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, যে ব্যক্তি আমাকে ভালবাসবে সে আমার সাথেই জান্নাতে থাকবে।” সুবহানাল্লাহ্!

[আন নি'মাতুল কুবরা আলাল আলাম ১০ পৃষ্ঠা]

ইমাম ইবন কাসির (রহঃ) তার বিখ্যাত সীরাত গ্রন্থে লিখেন :


ইবলিশ শয়তান জীবনে ঠিক এই সময়টাতেই খুব বেশি কেঁদেছে বা আফসোস করেছে।

أن إبليس رن أربع رنات حين لعن وحين أهبط وحين ولد رسول الله صلى الله عليه وسلم وحين أنزلت الفاتحة

১. আল্লাহ যখন তাকে অভিশপ্ত হিসেবে ঘোষণা দিলেন,

২. যখন তাকে বেহেস্ত থেকে বিতাড়িত করা হল,

৩. নূর নবীজীর (ﷺ) দুনিয়াতে আগমনের সময় এবং

৪. সূরা ফাতিহা নাযিল হবার সময়

[সূত্রঃ ইবন কাসির, আল আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা - ১৬৬]


হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী (রহ) তিনি বলেন-


قَالَ سُلْطَانُ الْعَارِفِيْنَ الْاِمَامُ جَلالُ الدِّيْنِ السُّيُوْطِىُّ قَدَّسَ اللهُ سِرَّهٗ وَنَوَّرَ ضَرِيْحَهُ فِىْ كِتَابِهِ الُمُسَمّٰى الْوَسَائِلِ فِىْ شَرْحِ الشَّمَائِلِ" مَا مِنْ بَيْتٍ اَوْ مَسْجِدٍ اَوْ مَحَلَّةٍ قُرِئَ فِيْهِ مَوْلِدُ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِلا حَفَّتِ الْمَلٰئِكَةُ ذٰلِكَ الْبَيْتَ اَوِ الْمَسْجِدَ اَوِ الْمَحَلًّةَ صَلَّتِ الْمَلٰئِكَةُ عَلٰى اَهْلِ ذٰلِكَ الْمَكَانِ وَعَمَّهُمُ اللهُ تَعَالٰى بِالرَّحْمَةِ وَالرِّضْوَانِ واَمَّا الْمُطَوَقُّوْنَ بِالنُّوْرِ يَعْنِىْ جِبْرَائيلَ وَمِيْكَائِيْلَ وَاِسْرَافِيْلَ وَعَزْرَائِيْلَ عَلَيْهِمُ السَّلامُ فَاِنَّهُمْ يُصَلُّوْنَ عَلٰى مَنْ كَانَ سَبَبًا لِقَرَائَةِ مَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاِذَا مَاتَ هَوَّنَ اللهُ عَلَيْهِ جَوَابَ مُنْكِرٍ وَنَكِيْرٍ وَيَكُوْنُ فِىْ مَقْعَدِ صِدْقٍ عِنْدَ مَلِيْكٍ مُّقْتَدِرٍ.


অর্থ: “যে কোন ঘরে অথবা মসজিদে অথবা মহল্লায় পবিত্র মীলাদুন নবী (ﷺ) উদযাপন করা হয় সেখানে অবশ্যই আল্লাহ পাকের ফেরেশতাগণ বেষ্টন করে নেন। আর তারা সে স্থানের অধিবাসীগণের উপর ছলাত-সালাম পাঠ করতে থাকেন। আর আল্লাহ পাক তাদেরকে [উক্ত লোকসকলকে] স্বীয় রহমত ও সন্তুষ্টির আওতাভুক্ত করে নেন। আর নূর দ্বারা সজ্জিত প্রধান ৪ ফেরেশতা অর্থাৎ হযরত জিবরায়ীল, মীকায়ীল, ইসরাফীল ও আযরায়ীল আলাইহিমুস সালামগণ মীলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপনকারীগণের উপর ছলাত-সালাম পাঠ করেন। যখন তারা [উদযাপনকারীগণ] ইনতিকাল করেন তখন আল্লাহ পাক তাদের জন্য মুনকার-নাকীরের সুওয়াল-জাওয়াব সহজ করে দেন। আর তাদের অবস্থান হয় আল্লাহ পাকের সন্নিধ্যে সিদ্দিকীনদের মাক্বামে।” সুবহানাল্লাহ্!

[ওয়াসিল ফি শরহে শামায়িল, আন নিয়ামাতুল কুবরা আলাল আলাম ১০ পৃষ্ঠা]


ইমাম কসতলানী (রহ) আরও বলেন: ”যাদের অন্তর রোগ-ব্যাধি দ্বারা পূর্ণ, তাদের কষ্ট লাঘবের জন্যে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর মীলাদের মাস (রবিউল আউয়ালের) প্রতিটি রাতকে যাঁরা উদযাপন করেন তাঁদের প্রতি আল্লাহতা’লা দয়াপরবশ হোন!” 

[আল-মাওয়া আল-লাদুন্নিয়া, ১ম খন্ড]


ইমাম সুলতান মোল্লা আলী কারী (রহ) 

[মুহাদ্দিস ও হানাফী ফেকাহবিদ] তিনি বলেন:

আল্লাহতা’লা এরশাদ ফরমান,

আত-তাওবাহ ৯:১২৮

لَقَدْ جَآءَكُمْ رَسُولٌ مِّنْ أَنفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُم بِٱلْمُؤْمِنِينَ رَءُوفٌ رَّحِيمٌ 

তোমাদের কাছে তোমাদের মধ্য থেকেই একজন রসূল এসেছে। তোমরা যাতে কষ্ট পাও তা তার জন্যও কষ্টদায়ক। সে তোমাদের কল্যাণকামী এবং মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল ও দয়ালু।




  কিছু ব্যাক্তি তারা কিভাবে বলে  মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন করা যাবে না

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম

 🌼 পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেন আমরা পালন করি🌼 🌸 রাসূল (ﷺ) মিলাদুন্নবী (ﷺ) পালন করার ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন...