শনিবার, ২৭ মার্চ, ২০২১

            ◑ ___লাইলাতুন নিসফ্ মিন শাবান____◑

     মুহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন রাকিব   


লাইলাতুন নিসফ্ মিন শা'বান অর্থ মধ্য শবানের রাত। বাংলাদেশ -ভারত ও পাকিস্তান এতদঞ্চলে এ রাত শবে বরাত নামে পরিচিত। কারণ আরবি ভাষাভাষী না হওয়ার কারণে আমরা এ অঞ্চলের মুসলমাদের ধর্মীয় ক্ষেত্রে শব্দের ব্যবহার ঊর্দু-ফারসির একটা প্রভাব লক্ষণীয়।  যেমন সালাতকে নামায, সাওমকে রোযা বলে থাকি। লাইলাতুন নিসফ্ মিন শা'বানকে শবে বরাত বলার কারণে এর মযার্দার কোন তারতম্য হবে না। 

     হাদিস শরীফে লাইলাতুন নিসফ্ মিন শাবান


শাবানের যে কি বাহার! কি যে আলোচনা করব। স্বয়ং রাসূলে পাক ﷺ ইরশাদ করেন, শাবান আমার মাস আর রমযান আল্লাহর মাস।

 [আল জামেয়ুল সগীর, ৩০১ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৪৮৮৯।] 


সায়্যিদাতুনা আয়েশা সিদ্দিকা রা. একদিন রাসূলে কারীমকে ﷺ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ ﷺ! সকল মাসের চেয়ে কি আপনার নিকট শাবনের রোযা রাখা অধিক প্রিয়? রাসূলে কারীম ﷺ ইরশাদ করলেন, আল্লাহ তায়ালা এই বৎসরে সকল মৃত্যুবরণকারীদের নাম এই মাসে লিখে দেন এবং আমি পছন্দ করি যে যখন আমার বিদায়ের সময় আসবে তখন যেন আমি রোযা অবস্থায় থাকি। অর্থাৎ রাসূলে কারীম ﷺ সম্পূর্ণ শাবান মাসে রোযা রাখতেন। 

[মুসনাদে আবু ইয়ালা, ৪র্থ খন্ড, ২৭৭ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৪৮৯০]



১৫ ই শাবানুল মুয়াজ্জামের রাত্রিটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ব্যপারে গুনিয়াতুত তালাবীনে আছে, অনেক কাফন ধুয়ে তৈরী করে রাখা হয় কিন্তু পরিধানকারীরা রাস্তায়-বাজারে ঘুরাফেরায় রত থাকে। কত কবর খনন করা হয় কিন্তু যারা দাফন হবে তারা হাসি-খুশিতে বিভোর থাকে। বহু দালানের নির্মাণ কাজ পূর্ণ হতে চলছে এদিকে দালানের মালিকেরও মৃত্যুর সময় পূ্র্ণ হতে চলছে।

[গুনিয়াতুত তালিবীন, ১ম খন্ড, ৩৪৮ পৃষ্ঠা]  আল্লাহু আকবার!


সায়্যিদুনা আলিউল মুরতাদ্বা রা. থেকে বর্ণিত রাসূলে কারীম ﷺ ইরশাদ করেন, যখন শাবানের ১৫ তম রাত আসে তখন রাতে কিয়াম করো আর দিনে রোযা রাখ। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা সূর্যাস্থের পর থেকে প্রথম আসমানে বিশেষ তাজাল্লী বর্ষণ করেন। আর বলতে থাকেন, কে আছ আমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনাকারী! আমি তাকে ক্ষমা করে দিব। কেউ আছ কি জীবিকা প্রার্থনাকারী আমি তাকে জীবিকা দিব।

কেউ আছ কি মুসিবতগ্রস্থ আমি তাকে উদ্ধার করব। কেউ আছ কি! কেউ আছ কি! সূর্য উদয় হওয়া পর্যন্ত এরুপ বলতে থাকেন। [সুনানে ইবন মাযাহ, ২য় খন্ড, ১৬০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-১৩৮৮]

আল্লাহ আকবার। স্বয়ং রব তায়ালার রহমতের ডাক আসছে আর আপনি ইবাদত না করে ঘুমিয়ে কাটাবেন এই মহান রাত্রিটি? এটা হতে পারে না। তবে কিছু হতভাগা এমন আছে যারা এই রাত্রিতেও ক্ষমা পাবে না!


এই রাতটি খুবই মহান। তাই অলসতা করে কাটানো উচিত নয়। এই রাতে আল্লাহ তায়ালা বনি কালব গোত্রের ছাগলের পশমের চেয়েও অধিক পরিমাণ ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দেন। কিতাবে আছে বনি কালব গোত্রটি আরবের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছাগল পালন করত। তবে রাসূলে কারীম ﷺ ইরশাদ করেন, ৬ প্রকারের ব্যক্তিকে এ রাতেও ক্ষমা করা হয় না। 

মদ্যপানে অভ্যস্থ, পিতা-মাতার অবাধ্য, ব্যাভিচারী, চুগলখোর, ছবি প্রস্তুতকারী, আত্নীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী। [ফাযায়েলুল আওকাত, ১ম খন্ড, ১৩০ পৃষ্ঠা, ২৭ নং হাদীস। ]

অনুরুপভাবে যাদুকর, গণক, মুসলমানদের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারী, অহংকার সহকারে কাপড় বা পায়জামা গোড়ালির নিচে ঝুলিয়ে পরিধানকারীদের ব্যপারেও সতর্কতা আছে।

আল্লাহ যেন এসব গুণাহ থেকে আমাদের মেহফুজ রাখেন।

 হযরত আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত,রাসূল(সঃ) ইরশাদ করেন,যখন শাবানের ১৪তারিখ আসবে,সো রাতে তোমরা কিয়াম করবে নামায বন্দেগীতে কাটাবে এবং দিনে রোযা রাখবে।

(ইবনে মাজাহ্১/৪৪৪ : হাদীস ১৩৮৮)(ইমাম বায়হাকী:শুয়াবুল ইমান:৫\৩৫৪ পৃ:হাদীস„৩৮২২)


হয়রত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর(রাঃ) হতে বর্ণিত,  রাসূল(সঃ) ইরশাদ করেন,৫রাত্রি দোয়া আল্লাহ্ ফেরত দেননা। ১জুমার রাত্র,২রজবের ১ম রাত্র,৩শাবানের ১৫তারিখ রাত(শবে বরাত) ৪-৫দু-ঈদের রাত।

(ইমাম আব্দুল রায়্য়াক:আল মুসান্নাফ:৪\৩১৭,পৃ:হা: ৭৯২৭)(ইমাম বাজ্জার:আল মুসনাদ:হা:৭৯২৭)

(সূয়ুতি:জামেউস সগীর:১\৬১০:হা:৮৩৪২,মুয়ায বিন জাবাল(রাঃ)এর সূত্র।)


#হযরত আবু ছালাবাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত,  প্রিয় নবী(সঃ) ইরশাদ করেন, আল্লাহ্ স্বীয় বান্দাদের প্রতি শা'বানের মধ্য রজনীতে(শবে বরাত) করুণা ভরা হৃদয়ে ক্ষমার দৃষ্টিতে তাকান,ফলে মুমিনদের ক্ষমা করে দেন এবং কাফিরদেরকে ইমান আনার সুযোগ দেন,আর হিংসুকদেরকে তাদের হিংসার মাঝে ছেড়ে দেন,যতক্ষণ না তারা তাদের হিংসা বিদ্বেষ ত্যাগ করে।

(ইমাম মুনযিরী:আত-তারগীব ওয়াত তারহীব:৪\২৪০:হা:২২)

(ইবনে হাজার হায়সামী : মাযামাউয যাওয়াইদ :৮\৬৫পৃ:হা:১২৯৬২)


#হযরত আতা ইবনে ইয়াসার (রাঃ) হতে বর্ণিত,রাসূল(সঃ) ইরশাদ করেন,শা'বানের মধ্য রজনীতে আয়ু নির্ধারণ করা হয়।ফলে দেখা যায় কেউ সফরে বের হয়েছে অথচ তার নাম মৃতদের তালিকায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে, আবার কেউ বিয়ে করছে অথচ তার নাম জীবিতের খাতা থেকে মৃত্যুর খাতায় লিখা হয়ে গেছে।  

       (ইমাম বাযযার :আল মুসনাদ :৩পৃ_১৫৮হাদিস :৭৯২৫)( ইবনে রাহবিয়্যাহ,মুসনাদ,৩\৯৮১,১৭০২)

 পবিত্র রাত্রিটিতে বেশি বেশি ইবাদত করার তৌফিক দেন।

ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম

 🌼 পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেন আমরা পালন করি🌼 🌸 রাসূল (ﷺ) মিলাদুন্নবী (ﷺ) পালন করার ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন...