শনিবার, ১০ জুলাই, ২০২১

কোরবানির নিয়ম🐪

 ‌‌‌‌‌            🐪যাদের উপর কোরবানি ওয়াজিব🐪

        ---------------------------------------------------------

কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার জন্য কিছু শর্ত রয়েছে। তা হল—

(১) মুসলিম হওয়া; সুতরাং অমুসলিমদের উপর তা ওয়াজিব নয়।

(২) মুকিম হওয়া; কাজেই মুসাফিরদের উপর কুরবানি ওয়াজিব নয়।

(৩) ধনী হওয়া অর্থাৎ নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া। এখানে এর অর্থ হল, যার উপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হয়, এটা উদ্দেশ্য নয় যে, যার উপর যাকাত ফরজ হয় (অর্থাৎ মাল এক বছর মালিকানায় থাকা এবং শর্ত নয়, বরং ঈদের দিন যদি নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদের মালিক থাকে তবেই তার উপর কুরবানি ওয়াজিব)। যে ব্যক্তি সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা অথবা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণের মালিক কিংবা মৌলিক প্রয়োজন ছাড়া যে ব্যক্তি এ পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়, যার মূল্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা অথবা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণের সমান, তবে  তার উপর কুরবানি ওয়াজিব।

(৪) বালেগ হওয়া; সুতরাং নাবালেগ এর উপর কুরবানি ওয়াজিব নয়,  তবে করলে ভাল। যদি কেউ বালেগ ছেলে অথবা স্ত্রীর পক্ষ হতে কুরবানি করতে চায় তবে তাদের থেকে অনুমতি নেয়া শর্ত। অনুমতি ব্যতীত ওয়াজিব আদায় হবে না। পুরুষ হওয়া শর্ত নয়। সম্পদশালী মহিলাদের উপরও কুরবানি ওয়াজিব হয়, যেমনটি পুরুষের উপর হয়।

(৫) সময় পাওয়া আবশ্যক অর্থাৎ দশ যুলহজ্জ সুবহে সাদিকের পর হতে বার যুলহজ্জ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত তিনদিন দু’রাত। এ দিনসমূহকে কুরবানির। দিন বা আইয়ামুন নাহর বলা হয়।

                           মাসাআলা

মাসআলা-১: শহরে কুরবানি করার বিধান হলো, ঈদের নামাযের পরেই তা করতে হবে নামাযের পূর্বে হবে না। আর গ্রামে কুরবানির জন্য এই শর্ত নেই গ্রামে সুবহে সাদিকের পর থেকেই কুরবানি হয়। কেননা গ্রামে ঈদের নামায নেই।

উল্লেখ্য যে, বর্তমান গ্রামগুলোতে শহরের হুকুমের আওতাভূক্ত।


মাসআলা-২: নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে কুরবানি হবে না। যদি কেউ করে ফেলে কুরবানি হয়নি, আবার কুরবানি করবে। আর সময়ের পরে কুরবানি করলেও কুরবানি হবে না। তবে তখন কুরবানির পশুর মূল্যের সমান সদকা করবে।


মাসআলা-৩: কুরবানির সময় কুরবানি করাই আবশ্যক, অন্যকিছু এর স্থলাভিষিক্ত হবে না। যেমন, কুরবানির পরিবর্তে লাখ টাকা সদকা করে দেয়া প্রভৃতি।

 

মাসআলা-৪: শর্তগুলো নির্দিষ্ট সময়ের পূর্ণ অংশেই পাওয়া জরুরি নয় বরং কুরবানির জন্য যে সময় নির্দিষ্ট করা হয়েছে ঐ সময়ের যে কোন অংশে শর্তগুলো পাওয়া যাওয়াই কুরবানি ওয়াজিব হওয়ার জন্য যথেষ্ট। যেমন, কোন ব্যাক্তি কুরবানির নির্দিষ্ট সময়ের প্রথম দিকে দরিদ্র ছিল এবং কুরবানির দিনসমূহের পরবর্তি যে কোন সময়ে ধনী হয়ে গেল, অনুরূপ :  মুসাফির মুকিম হয়ে গেল, অমুসলিম মুসলিম হয়ে গেল কিংবা নাবালেগ বালেগ হয়ে গেল, তবে তার উপর কুরবানি ওয়াজিব হয়ে যাবে।

        #পশু_কেনার_পর_হারিয়ে_গেলে_এর বিধান🐑


(১)কুরবানির পশু কেনার পর মারা গেছে, তখন ধনী ব্যক্তির উপর আবশ্যক যে অন্য আরেকটি পশু কুরবানি করবে। আর দরিদ্র ব্যক্তির উপর তা ওয়াজিব নয়।

(শামি)


 (২) যদি কুরবানির পশু হারিয়ে যায় বা চুরি হয়ে যায় এবং এর স্থানে অন্য পশু ক্রয় করে ফেলেছে, এমতাবস্থায় হারিয়ে যাওয়া বা চুরি হওয়া পশুটি আবার ফিরে পেয়েছে, তখন ধনী ব্যক্তির এখতিয়ার রয়েছে যে দুটোর মধ্যে যে কোন একটি কুরবানি করবে। আর দরিদ্র ব্যক্তি দুটোই কুরবানি করতে হবে। তবে ধনী ব্যক্তি যদি দ্বিতীয় পশুটিকে কুরবানি করে এবং এর মূল্য প্রথমটি হতে কম হয়, তবে যে মূল্যটা প্রথমটি হতে কম   হয়েছে তা সদকা করে দিতে হবে। কিন্তু প্রথমটিও কুরবানি করে দিলে আর সদকা ওয়াজিব থাকবে না।

(শামি)

                   🐄 কোরবানি করার পদ্ধতি, 🐄

 কুরবানির পশু উল্লেখিত শর্তগুলো মোতাবেক হবে এবং ঐসকল ত্রুটি হতে মুক্ত হবে, যে কারনে কুরবানি নাজায়েজ হয়।

▪ পশু ভাল এবং মোটা-তাজা হবে।

▪ কুরবানি করার পূর্বে পশুকে ঘাস-পানি দিবে, যেন ক্ষুদার্ত ও  পিপাসার্ত অবস্থায় জবাই করা না হয়।

▪ একটি পশুর সামনে অন্যটি জবাই করবে না।

▪ প্রথমে ছুরি ধারালো করে নিতে হবে।

▪ অতপর পশুটিকে বাম পাশে কেবলা মুখী করে শুইয়ে দিবে এবং নিজের ডান পা পশুটির গলার উপর রেখে তারাতারি জবাই করে দিবে।

▪ জবাই করার প্রথমে এ দোয়া পড়ে নিবে—


 اني وجهت وجهي للذي فطر السموات والارض حنيفا وما انا من المشركين. ان صلاتي ونسكي ومحياي ومماتي لله رب العالمين. لاشريك له وبذالك امرت وانا من المسلمين

 

উচ্চারণ: ইন্নী ওয়াজ্জা'হতু ও্যাজুহিয়া লিল্লাযী ফাতারাস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ্বা হানীফা ওয়ামা আনা- মিনাল্ মুশরিকীন। ইন্না ছলা  তী ওয়া নুসুকী ওয়া মা'হ্ইয়া-ইয়া ওয়া মামা-তী লিল্লা-হি রাব্বিল আ- লামীন। লা-শারীকা লাহু ওয়া বিযা-লিকা উমিরতু ওয়া আনা- মিনাল্ মুসলিমীন।


▪ কুরবানি নিজের পক্ষ হতে হলে জবাই করার পর নিমোক্ত এ দোয়াটি পড়বে—


 اللهم تقبل مني كما تقبلت من خليلك ابراهيم عليه السلام وحبيبك سيدنا محمد صلي الله عليه وسلم


উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা তাক্বাব্বাল্ মিন্-নী কামা- তাক্বাব্বালতা মিন খালীলিকা ইবরা-হীমা ‘আলাইহিস্ সালাম, ওয়া হাবীবিকা সায়্যিদিনা মু'হাম্মাদিন্ (ﷺ)। 


 ▪ আর যদি অন্যদের পক্ষ হতে জবাই করা হয় তবে مني (মিন্‌-নী) এর স্থলে من (মিন্) বলে তাদের নাম বলবে।

▪ যতক্ষণ পর্যন্ত পশুটি নিরব ও ঠান্ডা না হয়ে যায় ততক্ষণ পর্যন্ত হাত পা কাটবে না, চামড়া আলাদা করবে না।

                       পশু জবাই মাসআলা_

(১) নিজের কুরবানির পশু নিজ হাতে জবাই করাই উত্তম। অন্যের দ্বারা জবাই করালেও জায়েয হবে, তবে জবাই করার স্থানে উপস্থিত থাকা উত্তম।

(শামি)

(২) জবাই করার সময় ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলতে ভুলে গেলে পরে পড়ে নিবে।

(৩) জবাইকারী ক্বিবলামুখী হয়ে দাঁড়ানো সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। বিনা প্রয়োজনে অন্যদিকে হওয়া মাকরূহ।

(৪) প্রত্যেক মুসলমান নারী-পুরুষ, বালেগ-নাবালেগ, সুস্থ-পাগল, পবিত্র বা অপবিত্র সকলের জন্যই জবাই করা জায়েয। তবে শর্ত হলো, জবাই করার শরয়ি পদ্ধতি জানতে হবে এবং জবাই করার সময় বিসমিল্লাহ পড়তে হবে।

(মালাবুদ্দামিনহু)

(৫) শরয়ি নিয়ম অনুযায়ী জন্তু জবাই করার সময় চারটি রগ কাটতে হয়। শ্বাস নালী, খাদ্য নালী এবং ওহার দুই পাশে দুটি রক্তের মোটা রগসহ কমপক্ষে তিনটি কাটা গেলে খাওয়া হালাল হবে। অথবা উল্লেখিত চার রগের বেশির ভাগ কাটা গেলে জন্তু খাওয়া হালাল হবে অন্যথায় হারাম হবে।

(শামি)

(৬) জবাই করার সময় সম্পূর্ণ গলা কেটে ফেলা মাকরূহ।

(ফাতহুল কাদির)

(৭) কুরবানির জন্তু মেশিন দ্বারা জবাই করা জায়েজ। কিন্তু শর্ত হলো, সুইচ চালু করার সময় বিসমিল্লাহ বলতে হবে এবং উল্লেখিত রগ সমূহ কাটতে হবে।

(৮) জবাই করার সময় জন্তুর গলার উপর পা রাখা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।

(৯) বিসমিল্লাহ পড়ার পর জন্তু পালিয়ে গেলে দ্বিতীয়বার জবাই করতে 'বিসমিল্লাহ্ পড়া ওয়াজিব।

ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম

 🌼 পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেন আমরা পালন করি🌼 🌸 রাসূল (ﷺ) মিলাদুন্নবী (ﷺ) পালন করার ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন...