⊕__নামাযের গুরুত্ব ও প্রভাব__⊕
◑◑☞ আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের উপর ঈমান আনা এবং তাওহীদ ও রেসালাতের সাক্ষ্য দান করার পর ইসলামে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নামায।
এটা আল্লাহ পাকের জন্য খাস একটি ইবাদত।
কোরআন শরীফের পঞ্চাশটিরও বেশি আয়াতে এবং নবীজীর শতাধিক হাদীসে দৈনিক পাঁচওয়াক্ত নামায যথাযথভাবে আদায়ের উপর জোর তাগিদ দেয়া হয়েছে।
নামাযকে দ্বীনের খুটি এবং ইসলামের বুনিয়াদরূপে উল্লেখ করা হয়েছে।
⊕__নবীজীর দৃষ্টিতে নামায ও নামাযী__⊕
হাদীস থেকে জানা যায়, নামায না পড়াকে নবীজী কুফুরী কাজ এবং কাফেরের স্বভাব বলে উল্লেখ করেছেন। এক হাদীসে এসেছে,
لَا سَهْمَ فِي الْإِسْلَامِ لِمَنْ لَا صَلَاةَ لَهُ. قال الهيثمي: وَفِيهِ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ سَعِيدِ بْنِ أَبِي سَعِيدٍ، وَقَدْ أَجْمَعُوا عَلَى ضَعْفِهِ.
যার ভিতরে নামায নেই, তার ভিতর দ্বীনের কোনো হিস্যা নেই।
মুসনাদে বায্যার, হাদীস নং ৮৫৩৯
অন্য এক হাদীসে নবীজী ইরশাদ করেন,
إِنَّ بَيْنَ الرَّجُلِ وَبَيْنَ الشِّرْكِ وَالْكُفْرِ تَرْكَ الصَّلَاةِ
কোনো বান্দা আর কুফর-শিরকের মাঝে পার্থক্য বোঝা যাবে তার নামায তরকের দ্বারা।
______সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৪
হাদীসের মতলব হলো, যখন কেউ নামায ছেড়ে দিলো, তখন সে যেন কুফরের সঙ্গে গিয়ে মিলিত হলো। তার নামায না পড়াটা কুফুরির সমতুল্য।
নামায আদায় কত বড় সৌভাগ্যের বিষয় আর তরক করাটা কত বড় দুর্ভাগ্যের বিষয় সামনের হাদীস থেকে তা কিছুটা অনুমান করা যাবে। নবীজী ইরশাদ করেন,
مَنْ حَافَظَ عَلَيْهَا كَانَتْ لَهُ نُورًا، وَبُرْهَانًا، وَنَجَاةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَمَنْ لَمْ يُحَافِظْ عَلَيْهَا لَمْ يَكُنْ لَهُ نُورٌ، وَلَا بُرْهَانٌ، وَلَا نَجَاةٌ.
◑☞ যে ব্যক্তি নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামায যতেœর সাথে আদায় করবে, কেয়ামতের সময় এ নামায তার জন্য আলো হবে, তার ঈমান ও ইসলামের দলিল হবে এবং তার নাজাতের ওসিলা হবে। আর যে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়মিত নামায আদায় করবে না, কেয়ামতের বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে নামায তার জন্য আলো হবে না, দলিল হবে না এবং সে আযাব ও শাস্তি থেকে রেহাইও পাবে না।
________মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং[৬৫৭৬]
⊕__বে-নামাযীর লাঞ্ছনাকর অবস্থা__⊕
কেয়ামতের দিন বেনামাযী সর্ব প্রথম যে অপদস্থতা ও লাঞ্ছনার শিকার হবে, কোরআন শরীফের একটি আয়াতে তার বিবরণ এসেছে, যার মর্ম নিম্নরূপ-
يَوْمَ يُكْشَفُ عَنْ سَاقٍ وَيُدْعَوْنَ إِلَى السُّجُودِ فَلَا يَسْتَطِيعُونَ .خَاشِعَةً أَبْصَارُهُمْ تَرْهَقُهُمْ ذِلَّةٌ وَقَدْ كَانُوا يُدْعَوْنَ إِلَى السُّجُودِ وَهُمْ سَالِمُونَ
◑☞ কেয়ামতের সেই কঠিন দিনে যখন আল্লাহ তাআলার বিশেষ নূর প্রকাশ পাবে এবং সকল মানুষকে সিজদায় পড়ে যেতে বলা হবে, তখন (যে খোশনসীব দুনিয়াতে নামায পড়তো, সে তো সিজদায় পড়ে যাবে। কিন্তু) যারা নামায পড়তো না, তারা সিজদার জন্য ঝুঁকতেই পারবে না। (কারণ তাদের কোমরকে কাঠের মতো শক্ত করে দেওয়া হবে।) ভয় ও লজ্জার কারণে তাদের চক্ষু অবনমিত থাকবে। লাঞ্ছনা ও গঞ্জনার আযাব তাদেরকে ঘিরে ফেলবে। এ শাস্তি এই জন্য যে, দুনিয়াতে তাদেরকে সিজদার প্রতি আহ্বান করা হতো, যখন তারা সুস্থ সবল ছিলো। তা সত্ত্বেও তারা সিজদায় ঝুঁকে পড়তো না।
______সূরা ৬৮ আয়াত [৪২-৪৩]
আমার দ্বীনি ভাইও বোনরা ! নামাযই আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে বান্দার সম্পর্কের ভিত রচনা করে, মানুষকে আল্লাহ তাআলার রহমতের হকদার বানায়। সুতরাং নামায ছাড়া মুসলমান হওয়ার দাবী দলিলহীন ও ভিত্তিহীন।
নামায পড়ার ফায়দা__|
আল্লাহ তাআলার যে বান্দা দৈনিক পাঁচবার আল্লাহ তাআলার সামনে হাত জোড় করে দাঁড়ায়, তাঁর প্রশংসা ও স্তুতি গায়, তাঁর সামনে ঝোঁকে ও সিজদাবনত হয় এবং দুআয় নিমগ্ন হয়, সে বান্দা আল্লাহ তাআলার বিশেষ রহমত ও মুহাব্বতের অধিকারী হয়ে যায়। তাঁর গোনাহখাতা ঝরে যেতে থাকে, পাপের পঙ্কিলতা থেকে জীবন শুদ্ধ হতে থাকে, অন্তর আল্লাহ তাআলার নূরে নূরান্বিত হয়ে ওঠে। হাদীস শরীফে নবীজী বড় সুন্দর উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়েছেন,
أَرَأَيْتُمْ لَوْ أَنَّ نَهْرًا بِبَابِ أَحَدِكُمْ يَغْتَسِلُ مِنْهُ كُلَّ يَوْمٍ خَمْسَ مَرَّاتٍ، هَلْ يَبْقَى مِنْ دَرَنِهِ شَيْءٌ؟ قَالُوا: لَا يَبْقَى مِنْ دَرَنِهِ شَيْءٌ، قَالَ: فَذَلِكَ مَثَلُ الصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ، يَمْحُو اللهُ بِهِنَّ الْخَطَايَا
বলো তো, তোমাদের কারো ঘরের পাশেই যদি নহরনালা বহমান থাকে, আর সে তাতে দিনে পাঁচবার গোসল করে, তাহলে কি তার শরীরে কোনো ময়লা থাকতে পারে? সাহাবারা বললেন, ইয়া রাসুল আল্লাহ! কোনো ময়লা থাকতে পারে না। নবীজী বললেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাযেরও উদাহরণ তেমন। এর বরকতে বান্দার গোনাহখাতা মাফ হয়ে যায়।
_______সহীহ মুসলিম, হাদীস নং [৬৬৭]
◑◑☞ জামাতে নামায পড়ার গুরুত্ব ও ফজীলত
হাদীস শরীফ থেকে জানা যায়, নামাযের প্রকৃত ফজীলত ও বরকত জামাতে নামায পড়ার দ্বারা হাসিল হয়। নবীজী জামাতে নামায পড়ার উপর কঠিনভাবে গুরুত্ব আরোপ করেছেন। যারা অসতর্কতা ও অলসতার কারণে জামাতে শরিক হয় না, নবীজী একবার তাদের সম্পর্কে বলেন,
وَلَقَدْ هَمَمْتُ أَنْ آمُرَ بِالصَّلَاةِ، فَتُقَامَ، ثُمَّ آمُرَ رَجُلًا فَيُصَلِّيَ بِالنَّاسِ، ثُمَّ أَنْطَلِقَ مَعِي بِرِجَالٍ مَعَهُمْ حُزَمٌ مِنْ حَطَبٍ إِلَى قَوْمٍ لَا يَشْهَدُونَ الصَّلَاةَ، فَأُحَرِّقَ عَلَيْهِمْ بُيُوتَهُمْ بِالنَّارِ
আমার ইচ্ছা হয় এদের ঘরদোরে আগুন লাগিয়ে দিই।
______সহীহ মুসলিম, হাদীস নং [২৫২]
বোঝার জন্য এই একটি হাদীসই যথেষ্ট যে, জামাত তরক করাটা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নিকট কতটা অপছন্দীয় ছিলো। একটি হাদীসে এসেছে,
صَلَاةُ الرَّجُلِ فِي الْجَمَاعَةِ تَزِيدُ عَلَى صَلَاتِهِ وَحْدَهُ سَبْعًا وَعِشْرِينَ
একা নামায পড়ার চেয়ে জামাতে নামায পড়লে ২৭ গুণ বেশী সওয়াব হয়।
___সহীহ মুসলিম, হাদীস নং [২৫০]
আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ. الَّذِينَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ خَاشِعُونَ
ঐ সকল মুমিন সফল ও কামিয়াব, যারা খুশুখুজুর সঙ্গে নিয়মিত নামায আদায় করে।
___সূরা ২৩ আয়াত ১-২
এক হাদীসে নবীজি ইরশাদ করেন-
خَمْسُ صَلَوَاتٍ افْتَرَضَهُنَّ اللَّهُ تَعَالَى مَنْ أَحْسَنَ وُضُوءَهُنَّ وَصَلَّاهُنَّ لِوَقْتِهِنَّ وَأَتَمَّ رُكُوعَهُنَّ وَخُشُوعَهُنَّ كَانَ لَهُ عَلَى اللَّهِ عَهْدٌ أَنْ يَغْفِرَ لَهُ، وَمَنْ لَمْ يَفْعَلْ فَلَيْسَ لَهُ عَلَى اللَّهِ عَهْدٌ، إِنْ شَاءَ غَفَرَ لَهُ وَإِنْ شَاءَ عَذَّبَهُ
◑◑☞ পাঁচটি নামায আল্লাহ ফরজ করেছেন। যে ব্যক্তি যথানিয়মে ওজু করবে এবং যথাসময়ে নামায আদায় করবে, উত্তমরূপে রুকু সিজদা করবে এবং খুশুখুজুর সঙ্গে নামযগুলি পড়ে যাবে, তার জন্য আল্লাহ তাআলার ওয়াদা রয়েছে, তিনি অবশ্যই তাকে ক্ষমা করে দিবেন। কিন্তু যে ব্যক্তি যথাযথভাবে নামায আদায় করবে না তার জন্য আল্লাহ পাকের কোনো ওয়াদা নেই। চাইলে তাকে তিনি শাস্তি দিতে পারেন, ক্ষমাও করতে পারেন।
_____সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং [৪২৫]
আহলে সুন্নাহ্ ওয়াল জামাত।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন