রবিবার, ১১ এপ্রিল, ২০২১

রামাদ্বান মোবারকের ফজিলত

             রমজান ও এ মাসে রোজা রাখার ফজিলত 

                ==========================


শয়তানকে জিঞ্জিরায় বন্দী করা হয় 

হযরত    সায়্যিদুনা  আবু  হুরাইরা(রাদ্বিআল্লাহ্  তা'আলা      আনহু) ইরশাদ করেন, হুজুর  আকরাম    হযরত    মুহাম্মদ  (সাল্লাল্লাহু আলাইহি   ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ  করেছেন,  যখন রমযান   মাস আসে তখন আসমানের  দরজা   খুলে দেয়া হয়।

(বুখারী শরীফ, খন্ড-১ম, পৃষ্ঠা ৬২৬,হাদীস নং-১৮৯৯)


★   অন্য এক  বর্ণনায়   আছে    যে,      জান্নাতের দরজা  খুলে   দেয়া  হয়  এবং জাহান্নামের    দরজা বন্ধ করে দেয়া   হয়,  শয়তানকে শিকলে  বন্দী করা হয়। অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, রহমতের দরজা খুলে দেয়া হয়।

(সহীহ মুসলিম, পৃ-৫৪৩,হাদীস নং-১০৭৯)।


রোযা রাখার ফযিলতঃ


১) রোযার পুরস্কার আল্লাহ স্বয়ং নিজে প্রদান করবেনঃ হাদীসে কুদসীতে রাসূল সাল্লাল্লাহু  আলাইহি   ওয়া সাল্লাম   বলেন,  “আল্লাহ   তায়ালা  বলেছেন,  বনী আদমের    সকল আমল তার  জন্য,       অবশ্য রোযার কথা   আলাদা, কেননা রোযা আমার জন্য এবং আমিই এর পুরস্কার দিব।’’ 

(সহীহ বুখারী,     হাদীস  নং ১৮০৫,   ৫৫৮৩ ও   সহীহ  মুসলিম, হাদীস    নং ২৭৬০)


২) রোযা রাখা গোনাহের কাফফারা স্বরূপ এবং ক্ষমালাভের কারণ:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, 


‘‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে  সাওয়াবের আশায় রামাদান মাসে রোযা রাখবে,  তার পূর্বের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।’’ 

(সহীহ বুখারী,  হাদীস নং ১৯১০ ও সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮১৭)


৩) রোযা জান্নাত লাভের পথঃ

রাসূলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, 

“জান্নাতে একটি দরজা রয়েছে যাকে বলা হয় ‘রাইয়ান’। কিয়ামতের দিন এ দরজা   দিয়ে রোযাদারগণ প্রবেশ করবে।  অন্য   কেউ  এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে   পারবে     না।   রোযাদারগণ প্রবেশ করলে   এ দরজা বন্ধ  হয়ে     যাবে। ফলে আর কেউ সেখান দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।’’ 

(সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৭৯৭ ও সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭৬৬ ) 


রাসূলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

‘‘যার ৪) রোযাদারের জন্য রোযা শাফায়াত করবেঃ

উত্তমসনদে    ইমাম আহমাদ      ও     হাকেম বর্ণনা  করেন        যে,      রাসূল  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া  সাল্লাম বলেছেন,  ‘‘রোযা     এবং  কুরআন   কিয়ামতের    দিন বান্দার জন্য   শাফায়াত  করবে।   রোযা বলবে, হে রব!   আমি   তাকে দিবসে পানাহার    ও কামনা    চারিতার্থ  করা   থেকে নিবৃত্ত   রেখেছি।   অতএব,      তার ব্যাপারে আমাকে শাফায়াত করার অনুমতি দিন।’’ 

(মুসনাদ, হাদীস নং ৬৬২৬, আল-মুস্তাদরাক, হাদীস নং ২০৩৬) 


৫)রোযাদারের     মুখের  দুর্গন্ধ    আল্লাহর  কাছে    মিসকের                  সুগন্ধির  চেয়েও উত্তমঃ

হাতেমুহাম্মাদের   প্রাণ    তার   শপথ!    রোযাদারের      মুখের গন্ধ     কিয়ামতের   দিন আল্লাহর কাছে মিসকের চেয়েও সুগন্ধিময়।’’ 

(সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৯৪ ও সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭৬২)


৬) রোযা ইহ-পরকালে সুখ-শান্তি লাভের উপায়ঃ

রাসূলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

‘‘রোযাদারের জন্য দু’টো খুশীর সময় রয়েছে। একটি হলো ইফতারের সময় এবং অন্যটি স্বীয় প্রভু আল্লাহর সাথে মিলিত হওয়ার সময়।’’ 

(সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮০৫ ও সহীহ মুসলিম, হদীস নং ২৭৬৩) 


৭) রোযা জাহান্নামের অগ্নি থেকে মুক্তি লাভের ঢালঃ

রাসূলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, 

‘‘যে ব্যক্তি  আল্লাহর রাস্তায়  একদিন   রোযা রাখে,   আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে সত্তর বৎসরের দূরত্বে নিয়ে যান।’’ 

(সহীহবুখারী, হাদীস নং ২৬৮৫ ও সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭৬৭ ) 


৮) রোযা ঢালস্বরুপঃ

ইমাম আহমাদ বিশুদ্ধ  সনদে বর্ণনা করেন  রাসূল   সাল্লাল্লাহু   আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

‘‘রোযা  ঢাল    স্বরুপ।  যা দ্বারা  বান্দা  নিজেকে    আল্লাহর  আযাব   থেকে রক্ষা করতে পারে, যেভাবে তোমাদের কেউ একজন যুদ্ধে নিজেকে রক্ষা করে।’’ 

(মুসনাদ, হাদীস নং ১৭৯০৯)


৯)জাহান্নামের              অগ্নি     থেকে    সত্তর             বছরের     রাস্তা       পরিমাণ      দূরবর্তী হওয়াঃ

রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

‘‘যে কেউ আল্লাহর     রাস্তায়       (অর্থাৎ শুধুমাত্র আল্লাহকে   খুশী  করার জন্য) একদিন  সিয়াম  পালন  করবে,   তা  দ্বারা    আল্লাহ     তাকে জাহান্নামের অগ্নি থেকে সত্তর বছরের রাস্তা পরিমাণ দূরবর্তীস্থানে রাখবেন’’।

[সহীহ মুসলিম : ২৭৬৭]


১০) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

‘যে লোক  ন্যায়  সঙ্গত কারণ ছাড়া রমজানের একটি  রোজা ভেঙে ফেলবে, এরপর সে সারাজীবন রোজা রাখলেও তার ক্ষতি পূরণ হবে না’।

 ★ তিরমিজী,

 ★ নাসায়ী,

 ★ ইবনে মাজাহ,

 ★ ইবনে খুজায়মাহ


রোজাদারের মর্যাদা ও রমজানের রোজা রাখার ফজীলত 

==========================


১. রোজার প্রতিদান  আল্লাহপাক নিজেই  দেবেন এবং বিনা হিসাবে  প্রত্যেক নেক   আমলের   নির্ধারিত   সওয়াব ও  প্রতিদান   রয়েছে  যার মাধ্যমে আল্লাহ পাক  আমলকারীকে পুরস্কৃত করবেন। কিন্তু রোজারবিষয়টি  সম্পূর্ণ  আলাদা। কারণ রোজার বিষয়ে আছে আল্লাহর পক্ষ থেকে এক অনন্য ঘোষণা।

হযরত আবু  হুরায়রা   রাঃ    থেকে    বর্ণিত রাসুলুল্লাহ  (সাঃ) বলেন,   মানুষের প্রতিটি   আমলের  প্রতিদান    বৃদ্ধি      করা  হয়।  একটি নেকির সওয়াব  দশগুণ থেকে সাতশ’ গুণ পর্যন্ত হতে পারে।  আল্লাহ তায়ালা  বলেন,    কিন্তু   রোজার বিষয়টা আলাদা।  কেননা তা আমার  জন্য এবং  আমি নিজেই     এর বিনিময় প্রদান  করবো। বান্দা একমাত্র আমার জন্য নিজের প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং পানাহার পরিত্যাগ করেছে।


১. সহীহ মুসলিম ১১৫১

২. মুসনাদে আহমাদ ৯৭১৪


আল্লাহ তায়ালা রোজাদারদের কিয়ামতের দিন পানি পান করাবেন

হযরত আবু   মুসা  (রাঃ)   থেকে        বর্ণিত,  আল্লাহ         তায়ালা    নিজের   উপর অবধারিত    করে          দিয়েছেন   যে  ব্যক্তি   আল্লাহর  সন্তুষ্টির  জন্য   গ্রীষ্মকালে (রোজা   রাখার     কারণে)   পিপাসার্ত      থেকেছে,    তিনি  তাকে   তৃষ্ণার        দিন (কিয়ামতের দিন) পানি পান করাবেন।


৩ রোজা জান্নাত লাভে পথ

হযরত      আবু   ওমামা  রাঃ হতে  বর্ণিত,  আমি রাসুলুল্লাহ’র   (সাঃ)   দরবারে গিয়ে বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ, আমাকে এমন একটি আমল বলে দিন যার দ্বারা আমি   জান্নাতে  প্রবেশ  করতে   পারি।    রাসুলুল্লাহ বললেন,  তুমি রোজা রাখ। কেননা এর সমতুল্য কিছু নেই। আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম। রাসুল (সাঃ) জবাব দিলেন, তুমি রোজা রাখ। 

(মুসনাদে আহমাদ ২২১৪৯)


৪ রোজাদার বেহেস্তে প্রবেশ করবেরাইয়ান নামক বিশেষ দরজা দিয়ে

হযরত   সাহল   ইবনে সা’দ রাঃ   হতে বর্ণিত, নবী (সাঃ) বলেছেন,   জান্নাতে একটি দরজা   আছে  যার  নাম   রাইয়ান।   কিয়ামতের  দিন এ  দরজা        দিয়ে কেবল  রোজাদারগণ   প্রবেশ করবেন।  অন্য কেউ প্রবেশ    করতে পারবে  না। ঘোষণা করা হবে কোথায় সেই সৌভাগ্যবান রোজাদারগণ? তখন তারা উঠে দাঁড়াবে।   তারা    ব্যতীত  কেউ এ   দরজা    দিয়ে প্রবেশ     করতে     পারবে    না। অতঃপর রোজাদারগণ যখন  প্রবেশ করবে, তখন তা বন্ধ করে দেওয়া হবে। ফলে কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।

১. সহীহ মুসলিম ১১৫২

২. মুসনাদে আহমাদ ২২৮১৮


৫. রোজা জাহান্নাম থেকে রক্ষাকারী ঢালও দুর্গ

হযরত  জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত,   রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,   রোজা  হলো (জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ লাভের) ঢাল ও সুরক্ষিত দূর্গ।

(মুসনাদে আহমাদ ৯২২৫)


৬ রোজ কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবে

হযরত  আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ)  বর্ণিত,   রাসুল (সাঃ) বলেছেন, রোজা ও কুরআন কিয়ামতের  দিন বান্দার জন্য  সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে রব, আমি তাকে খাদ্য ও যৌন  সম্ভোগ থেকে  বিরত  রেখেছি। অতএব  তার ব্যাপারে আমার   সুপারিশ  গ্রহণ করুন।  কুরআন বলবে, আমি তাকে রাতের ঘুম     থেকে   বিরত      রেখেছি। অতএব  তার   ব্যাপারে আমার সুপারিশ   গ্রহণ করুন।

রাসুল (সাঃ) বলেন, অতঃপর তাদের উভয়ের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। 

(মুসনাদে আহমাদ ৬৬২৬)


৭ রোজাদারের সকল গুনাহ মাফ হয়ে যায়

হযরত          আবু হুরায়রা রাঃ বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ  (সাঃ)  বলেছেন,      যে   ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমজান মাসের  রোজা  রাখে তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয়। 

(সহীহ বুখারি ২০১৪)


৮ রোজাদারের মুখের গন্ধ মিশকেরচেয়েও সুগন্ধিযুক্ত

হযরত আবু হুরায়রা  রাঃ  বর্ণিত, রাসুল (সাঃ) বলেছেন,  শপথ  সেই সত্ত্বার যার হাতে রয়েছে মুহাম্মদের প্রাণ, রোজাদারের মুখের  গন্ধ আল্লাহতায়ালার কাছে মিশকের সুগন্ধির চেয়েও অধিক সুগন্ধিময়। 

(সহীহ বুখারি ১৯০৪)

৯ রোজাদারের দুটি আনন্দের মুহূর্ত

হযরত   আবু হুরায়রা রাঃ বর্ণিত, নবীজী (সাঃ) বলেছেন,  রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দের মুহূর্ত রয়েছে। যখন সে আনন্দিত হবে-

এক. ইফতারের সময়। তখন সে ইফতারের কারণে আনন্দ পায়।

দুই. যখন সে তার রবের সঙ্গে সাক্ষাত লাভ করবে তখন তার আনন্দ হবে।

অপর এক বর্ণনায় এসেছে, যখন তার প্রতিপালক রোজার পুরস্কার দিবেন।

(সহীহ মুসলিম ১১৫১)


১০ রোজাদারের দুয়া কবুল হয়

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী (সাঃ) ইরশাদ করেন, ইফতারের  সময়   রোজাদার      যখন  দুয়া     করেন তখন   তার   দুয়া    ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। (অর্থাৎ দুয়া কুবল কর হয়) 

(সুনানে ইবনে মাজাই ১৭৫৩)

==========================

তথ্যসূত্র --  ফযায়েলে রামযান

#ইসলামী বিশ্বকোষ এ্যপ্স।

ডাউনলোড করুন ইসলাম সম্পর্কে জানুন


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম

 🌼 পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেন আমরা পালন করি🌼 🌸 রাসূল (ﷺ) মিলাদুন্নবী (ﷺ) পালন করার ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন...