সোমবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২১

ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম

 🌼পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেন আমরা পালন করি🌼

🌸রাসূল (ﷺ) মিলাদুন্নবী (ﷺ) পালন করার ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন। হাদিস শরীফটি হলো নিম্নরূপঃ

عَنْ أَبِي قَتَادَةَ الْأَنْصَارِيِّ، رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُئِلَ عَنْ صَوْمِ الِاثْنَيْنِ؟ فَقَالَ: فِيهِ وُلِدْتُ - 


(৯)-‘‘হযরত আবু কাতাদাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বর্ণনা করেন, রাসূলে করিম (ﷺ) কে সোমবার রোযা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, তার উত্তরে রাসূলে করিম ((ﷺ)) বললেন “এ দিন আমার মিলাদুন্নবী (ﷺ) অর্থাৎ এ দিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি।’’

🔺(মেশকাত শরীফ- ১৭৯ পৃ; মুসলিম শরীফ- ১/৩৬৮ পৃ.)


 আলোচ্য হাদিস শরীফের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো রাসূল (ﷺ) শোকরিয়া স্বরূপ রোজা রেখে সাপ্তাহিক মিলাদুন্নবী (ﷺ) পালন করেছেন।

━━━━━━━━━━━━━━━━

🌼ওলামায়ে উম্মতের কওল ও আমলের আলোকে মীলাদুন্নবী (ﷺ)


১. মুহাদ্দিস ইমাম ইবনুল জাওযী (رحمة الله) 🔺(ওফাত. ৫৯৭ হি.) বলেন- 


لا زال أهل الحرمين الشريفين والمصر واليمن والشام وسائر بلاد العرب من المشرق والمغرب يحتفلون بمجلس مولد النبى صلى الله عليه وسلم ويفرحون بقدومه هلال شهر ربيع الأول و يهتمون اهتماما بليغا على السماع والقراءة لمولد النبى صلى الله عليه وسلم وينالون بذلك أجرا جزيلا وفوزا عظيما- 


“মক্কা, মদীনা, ইয়ামন, শাম ও তামাম ইসলামী বিশ্বের পূর্ব ও পশ্চিমবাসীরা সবসময় হুজুর (ﷺ) এর বেলাদাত শরীফের ঘটনায় মীলাদ মাহফিল আয়োজন করত। তারা রবিউল আউয়াল মাসের নতুন চাঁদ উদিত হলে খুশি হয়ে যেত এবং হুজুরের মিলাদ শুনা ব্যাপারে ও পড়ার সীমাহীন গুরুত্বারোপ করত। আর মুসলমানগণ এসব মাহফিল কায়েম করে পরিপূর্ণ প্রতিদান ও আধ্যত্মিক কামিয়াবী হাছিল করত।” 

🔺(ইমাম যওজী, বয়ানুল মিলাদুন্নবী- ৫৮ পৃ.)


৩. ইমামুল হাফেজ সাখাভী (رحمة الله) বলেন-


لا زال أهل الإسلام في سائر الأقطار والمدن الكبار يحتفلون في شهر مولده صلى الله عليه وسلم بعمل الولائم البديعة المشتملة 

-“বিশ্বের চতুর্দিকে ও শহরগুলোতে হুজুর (ﷺ) এর জন্ম গ্রহণের মাসে মুসলমানরা বড় বড় আনন্দনুষ্ঠান করে থাকে।” 

🔺(মোল্লা আলী ক্বারী, মাওয়ারিদুর রাবী, ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ১/ ৩৬২ পৃ. )

৪. ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ূতী (رحمة الله) বলেন- 

عِنْدِي أَنَّ أَصْلَ عَمَلِ الْمَوْلِدِ الَّذِي هُوَ اجْتِمَاعُ النَّاسِ وَقِرَاءَةُ مَا تَيَسَّرَ مِنَ الْقُرْآنِ وَرِوَايَةُ الْأَخْبَارِ الْوَارِدَةِ فِي مَبْدَأِ أَمْرِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَا وَقَعَ فِي مَوْلِدِهِ مِنَ الْآيَاتِ، ثُمَّ يُمَدُّ لَهُمْ سِمَاطٌ يَأْكُلُونَهُ وَيَنْصَرِفُونَ مِنْ غَيْرِ زِيَادَةٍ عَلَى ذَلِكَ - هُوَ مِنَ الْبِدَعِ الْحَسَنَةِ الَّتِي يُثَابُ عَلَيْهَا صَاحِبُهَا لِمَا فِيهِ مِنْ تَعْظِيمِ قَدْرِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَإِظْهَارِ الْفَرَحِ وَالِاسْتِبْشَارِ بِمَوْلِدِهِ 


-“আমার মতে মিলাদের জন্য সমাবেশ করা, তেলাওয়াতে কোরআন, হুজুর (ﷺ) এর পবিত্র জীবনের বিভিন্ন ঘটনাবলী এবং জন্ম গ্রহণকালীন গঠিত নানান আলামত সমূহের আলোচনা করা এমন বেদআতে হাছানার অন্তর্ভুক্ত; যে সব কাজের ছওয়াব দেয়া হয়। কেননা এতে হুজুর (ﷺ) এর তা’জিম, মোহাব্বত এবং তাঁর আগমনের খুশী জাহির করা হয়।”

🔺(ইমাম সুয়ূতি, আল-হাভীলিল ফাতওয়া, ১/২২১পৃ.)


৫. ইমাম হাফেজ ইবনে হাজর মক্কী (رحمة الله) বলেন- 


الموالد والأذكار الَّتِي تفعل عندنَا أَكْثَرهَا مُشْتَمل على خير، كصدقة، وَذكر، وَصَلَاة وَسَلام على رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم


-“আমাদের এখানে মিলাদ মাহফিল জিকর-আজকার যা কিছু অনুষ্ঠিত হয়, তার অধিকাংশই ভাল কাজের অন্তর্ভুক্ত। যেমন, সাদকা করা, জিকির করা, দরুদ পড়া, ও রাসূলে পাক (ﷺ) এর উপর ছালাম পেশ করা।”

🔺(ইবনে হাজার মক্কী, ফাতওয়া হাদিসিয়্যাহ, ১/১০৯ পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।)


৬. বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা ইমাম কুস্তালানী (رحمة الله) লিখেন-


ولا زال أهل الاسلام يحتفلون بشهر مولوده صلى الله عليه وسلم ويعملون الولائم ويتصد قون فى لياليه بانواع الصدقات ويظهرون السرور ويزيدون فى المبرات ويعتنون بقرأة مولده الكريم ويظهر عليهم من بركاته كل فضل عميم – 


-‘‘প্রতিটি যুগে মুসলমানগণ নবী করীম (ﷺ) এর বেলাদাত শরীফের মাসে মীলাদ মাহফিলের আয়োজন করে আসছে, উন্নত মানের খাবারের আয়োজন করেন, এর রাতগুলোতে বিভিন্ন ধরণের সাদক্বাহ খায়রাত করেন, আনন্দ প্রকাশ করতে থাকেন, পুন্যময় কাজ বেশি পরিমাণে করার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে আসেন। ফলে আল্লাহর অসংখ্য বরকত ও ব্যাপক অনুগ্রহ প্রকাশ পায়।’’

🔺(আল্লামা ইমাম যুরকানী : শরহুল মাওয়াহেব : ১ম খন্ড : ২৬২ পৃষ্ঠা)


৭. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেন-


لازال اهل الاسلام يختلفون فى كل سنة جديدة ويعتنون بقراءة مولده الكريم ويظهر عليهم من بركاته كل فضل عظيم.


-‘‘মুসলমানগণ প্রতি নববর্ষে মাহফিল করে আসছেন এবং তাঁরা মীলাদ পাঠের আয়োজন করেন। এর ফলে তাদের প্রতি অসীম রহমতের প্রকাশ ঘটে।’’

🔺(মোল্লা আলী ক্বারী, মাওয়ারিদুর রাভী, ৫ পৃ. )

তাফসীরে রুহুল বায়ান প্রণেতা আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) বলেন-


ومن تعظيمه عمل المولد إذا لم يكن فيه منكر قال الامام السيوطي قدس سره يستحب لنا اظهار الشكر لمولده عليه السلام


-‘‘মীলাদ শরীফ করাটা হুযুর (ﷺ)-এর প্রতি সম্মান, যদি এটা মন্দ কথা বার্তা থেকে মুক্ত হয়। ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) বলেন, হুযুর (ﷺ)-এর বেলাদাতের শুকরিয়া জ্ঞাপন করা আমাদের জন্য মুস্তাহাব।’’

🔺(ইসমাঈল হাক্কী, রুহুল বায়ান, ৯/৫৬পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।)


৯. শায়খ আব্দুল হক মোহাদ্দেসে দেহলভী (رحمة الله) বলেন- 


لا يزال اهل الاسلام يحتفلون بشهر مولده صلى الله عليه وسلم ويعملون الولائم ويتصدقون فى لياليه بانواع الصدقات ويظهرون السرور ويزيدون فى المبرات ويعتنون بقراء مولده الكريم- 


-“হুজুর (ﷺ) এর পবিত্র বেলাদতের মাসে মিলাদ-মাহফিলের আয়োজন সমগ্র মুসলিম বিশ্বে সর্বদাই পালিত হয়ে আসছে। ঐ মাসের রাত্রিতে দান ছদকা করে, আনন্দ প্রকাশ করে এবং ঐ স্থানে বিশেষভাবে নবীর আগমনের উপর প্রকাশিত বিভিন্ন ঘটনাবলীর বর্ণনা করা মুসলমানদের বিশেষ আমল সমূহের অন্তর্ভুক্ত।”

🔺(শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী, মা সাবাতা বিসুন্নাহ, ৬০পৃ.)


১০. শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ্ মোহাদ্দেসে দেহলভী (رحمة الله) বলেন- 


وكنت قبل ذالك بمكة المعظمة فى مولد النبى صلى الله عليه وسلم فى يوم ولادته والناس يصلون على النبى صلى الله عليه وسلم - 


-“মক্কা মোয়াজ্জামায় হুজুর (ﷺ) এর বেলাদত শরীফের দিন আমি এমন একটি মিলাদ মাহফিলে শরীক হয়েছিলাম, যাতে লোকেরা হুজুরের দরগাহে দুরূদ-ছালাতের হাদিয়া পেশ করছিল।”

🔺(শাহ ওয়ালী উল্লাহ দেহলভী, ফয়জুল হারামাঈন, ৮০-৮১পৃ.)


১১. অন্যত্র তিনি স্বীয় পিতা হযরত শাহ্ আব্দুর রহীম দেহলভী (رحمة الله) এর সূত্রে উল্লেখ করে বলেন- 


كنت اصنع في أيام المولد طعاما صلة بالنبي صلى الله عليه وسلم فلم يفتح لي سنة من السنين شئ اصنع به طعاما فلم اجد الا حمصا مقليا فقسمته بين الناس فرأيته صلى الله عليه وسلم بين يديه هذا الحمص مبتهجا وبشاشا- 


-“আমি প্রতি বছর হুজুর (ﷺ) এর মিলাদে মাহফিলে খানার ব্যবস্থা করতাম। কিন্তু এক বছর আমি খাবার যোগাড় করতে পারিনি। তবে কিছু ভুনা করা চনাবুট পেয়েছিলাম। অতঃপর আমি তা মিলাদে আগত মানুষের মধ্যে বন্টন করে দিলাম। পরে আমি স্বপ্নে হুজুর (ﷺ)কে বড়ই খোশ হাসেল তাশরিফ আনতে দেখলাম এবং তার সামনে মওজুদ রয়েছে উক্ত চনাবুট (যা আমি বন্টন করেছিলাম)।”

🔺(শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী, আদ-দুরুরুস সামীন, ৪০পৃ. )


১২. আহলে হাদিসের ইমাম ইবনে তাইমিয়া বলেন-


فتعظيم المولد، واتخاذه موسمًا، قد يفعله بعض الناس، ويكون له فيه أجر عظيم لحسن قصده، وتعظيمه لرسول الله صلى الله عليه وسلم، كما قدمته لك أنه يحسن من بعض الناس، ما يستقبح من المؤمن المسدد.


-“আমি ইতোপূর্বে আলোচনা করছি যে মিলাদকে মানুষেরা মৌসুমীভাবে পালন করে তা’জিম করে থাকে, এতে তাদের অনেক সাওয়াব হবে। আর এটাও সুস্পষ্ট যে, কিছু লোক এটাকে হাসান মনে করে, কারণ সঠিক মু’মিন ব্যক্তি মন্দ কাজ করে না।” 

🔺(ইবনে তাইমিয়া, একতেদ্বাউল সিরাতাল মুস্তাকিম ২/১২৬ পৃ. দারুল আ‘লামুল কিতাব, বয়রুত, লেবানন)


১৩. দেওবন্দীদের পীরানে পীর হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজের মক্কী (رحمة الله) বলেন-  


ہمارے علماء مولد شريف میں بہت تنازعه كرتے ہیں تاہم علماء جواز كى طرف بہى گۓ ہیں - جب صورت جواز كى موجود ہے پہر كيوں ايسا تشدد كر تے ہيں اور ہمارے واسطے اتباع حرمين كافى ہے- 


-“আমাদের আলেমগণ মওলুদ শরীফ নিয়ে অনেক ঝগড়া করে থাকে। এরপরেও আলেমগণ কিন্তু জায়েযের পক্ষে মত ব্যক্ত করেছেন। যখন জায়েযের ছুরত রয়ে গেছে, তো এত বাড়াবাড়ির কি প্রয়োজন। আমাদের জন্য হারামাঈনের অনুসরণ করাই যথেষ্ঠ।”

🔺(হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজেরে মক্কী, কুল্লিয়াতে এমদাদিয়া, ২০৭পৃ. ফয়সালায়ে হাফতে মাসায়েল, ৭-৮ পৃ.)


হযরত হাজী সাহেব (رحمة الله) ফয়সালায়ে হাফতে মাসয়ালা গ্রন্থে নিজের আমলও বর্ণনা করে দিয়েছেন- 


فقير مشرب يہ ہے محفل مولد میں شريك ہوتا بلكہ بركات كا ذريعہ سمجہ كر ہر سال منعقد كرتا ہوں اور قيام میں لطف اور لذت پا ہوں 


-“এই ফকীরের নিয়ম হল এই যে, আমি মওলুদ মাহফিলে অংশ গ্রহণ করি, এমনকি বরকতের ওসিলা মনে করে প্রতি বছর উক্ত অনুষ্ঠান করে থাকি এবং কিয়ামের মধ্যে লুতফ (ভালবাসা) ও লাজ্জাত (স্বাদ) পেয়ে থাকি।” 

🔺(হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজেরে মক্কী, কুল্লিয়াতে এমদাদিয়া, ২০৭ পৃ., ফয়সালায়ে হাফতে মাসায়েল, ৭-৮ পৃ.)

বিঃদ্র=> দেওবন্দীদেরকে বলবো যে নিজের পীরানে পীরকে মানেন না তো কেমন আদব ওয়ালা মুরীদ আপনারা?

      মিলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপনের ফজিলত

         ইমাম হযরত হাসান বছরী (রহঃ)                 

[বিশিষ্ট তাবিয়ী, যিনি শতাধিক সাহাবায়ে কিরাম (রা) গণের সাক্ষাত লাভ করেছিলেন] তিনি বলেন-


قال الحسن البصرى رحمة الله عليه وَدِدْتُّ لَوْ كَانَ لِىْ مِثْلُ جَبَلِ اُحُدٍ ذَهْبًا فَاَنْفَقْتُهٗ عَلٰى قِرَاءَةِ مَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.


অর্থ: ‘আমার একান্ত ইচ্ছা হয় যে, আমার যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ থাকতো তাহলে তা পবিত্র মীলাদুন্নবী (ﷺ) উপলক্ষে ব্যয় করতাম।’সুবহানাল্লাহ!

[আন নি'মাতুল কুবরা আলাল আলাম ৮ পৃষ্ঠা]


ইমাম হযরত ইমাম শাফিয়ী (রহ) বলেন-


قَالَ اَلاِمَامُ الشَّافِعِىُّ رَحِمَهُ اللهُ مَنْ جَمَعَ لِمَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ اِخْوَانًا وَهَيَّاَ طَعَامًا وَاَخْلٰى مَكَانًا وَعَمَلَ اِحْسَانًا وَصَارَ سَبَبًا لِقِرَائَتِهٖ بَعَثَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَعَ الصِّدِّيْقِيْنَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِيْنَ وَيَكُوْنُ فِىْ جَنَّاتِ النَّعِيْمِ.


অর্থ: ‘যে ব্যক্তি পবিত্র মীলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপন উপলক্ষে :

- লোকজন একত্রিত করলো, 

- খানাপিনার ব্যবস্থা করলো,

- জায়গা নির্দিষ্ট করলো এবং 

- এ জন্য উত্তমভাবে তথা সুন্নাহ ভিত্তিক আমল করলো 

- তাহলে উক্ত ব্যক্তিকে আল্লাহ পাক হাশরের দিন ছিদ্দীক্ব, শহীদ ছলিহীনগণের সাথে উঠাবেন এবং উনার ঠিকানা হবে জান্নাতে নায়ীমে।’ সুবহানাল্লাহ!

[আন নি'মাতুল কুবরা আলাল আলাম ১০ পৃষ্ঠা]


হযরত জুনাইদ বাগদাদী (রহ) বলেন-


قال جنيد البغدادى رحمة الله عليه مَنْ حَضَرَ مَوْلِدَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعَظَّمَ قَدَرَهٗ فَقَدْ فَازَ بِالاِيْمَانِ.


অর্থ: “যে ব্যক্তি পবিত্র মীলাদুন্নবী (ﷺ) এর আয়োজনে উপস্থিত হবে এবং উপযুক্ত সম্মান প্রদর্শন করবে সে বেহেশ্তী হবে।” সুবহানাল্লাহ!

[আন নি'মাতুল কুবরা আলাল আলাম ৮ পৃষ্ঠা]


বিখ্যাত ইমাম হযরত ইমাম মারূফ কারখী (রহ) বলেন-


قال المعروف الكرخى رحمة الله عليه مَنْ هَيَّأَ طَعَامًا لاَجْلِ قِرَائَةِ مَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَجَمَعَ اِخْوَانًا وَاَوْقَدَ سِرَاجًا وَلبِسَ جَدِيْدًا وَتَبَخَّرَ وَتَعَطَّرَ تَعْظِيْمًا لِمَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَشَرَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَعَ الْفِرْقَةِ الاُوْلٰى مِنَ النَّبِيّنَ وَكَانَ فِىْ اَعْلٰى عِلِّيِّيْن.


অর্থ: “যে ব্যক্তি পবিত্র ঈদে মীলাদুন্নবী (ﷺ) উপলক্ষে খাদ্যের আয়োজন করে, অতঃপর লোকজনকে জমা করে, মজলিসে আলোর ব্যবস্থা করে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নতুন পোশাক পরিধান করে, সুঘ্রাণ ও সুগন্ধি ব্যবহার করে, আল্লাহ পাক তাকে নবী আলাইহিমুস সালামগণের প্রথম কাতারে হাশর করাবেন এবং সে জান্নাতের সুউচ্চ মাক্বামে অধিষ্ঠিত হবেন।” সুবহানাল্লাহ্!

[আন নি'মাতুল কুবরা আলাল আলাম ৮ পৃষ্ঠা]


ইমাম ফখরুদ্দিন রাজি (রহ) বলেন-


مَا مِنْ شَخْصٍ قَرَاَ مَوْلِدَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلٰى مِلْحٍ اَوْ بُرٍّ اَوْشَىء اٰخَرَ مِنَ الْمَأكُوْلاتِ اِلا ظَهَرَتْ فِيْهِ الْبَركَةُ فِىْ كُلِّ شَىء. وَصَلَ اِِلَيْهِ مِنْ ذٰلِكَ الْمَأكُوْلِ فَاِنَّهٗ يَضْطَرِبُ وَلا يَسْتَقِرُّ حَتى يَغْفِرَ اللهُ لاٰكِلِهٖ.

অর্থ: যে ব্যক্তি পবিত্র মীলাদুন নবী (ﷺ) উদযাপন করে লবণ, গম বা অন্য কোন খাদ্য দ্রব্যের উপর ফুঁক দেয়, তাহলে এই খাদ্য দ্রব্যে অবশ্যই বরকত প্রকাশ পাবে। এভাবে যে কোন কিছুর উপরই পাঠ করুক না কেন, তাতে বরকত হবেই। উক্ত খাদ্য-দ্রব্য মীলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপনকারীর জন্য আল্লাহ পাকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে, এমনকি তাকে ক্ষমা না করা পর্যন্ত সে ক্ষান্ত হয় না।” সুবহানাল্লাহ!

[আন নি'মাতুল কুবরা আলাল আলাম ৯ পৃষ্ঠা]


قال السر سقتى رحمة الله عليه مَنْ قَصَدَ مَوْضعًا يُقْرَأُ فِيْهِ مَوْلِِدُ النَّبِىِّ صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَدْ قَصَدَ رَوْضَةً مِنْ رِيَاضِ الْجَنَّةِ لاَنَّهٗ مَا قَصَدَ ذٰلِكَ الْمَوْضعَ اِلا لِمُحَبَّةِ النَّبِىِّ صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.


অর্থ: “যে ব্যক্তি পবিত্র মীলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপন করার জন্য স্থান নির্দিষ্ট করলো সে যেন নিজের জন্য জান্নাতে একটি বাগান নির্দিষ্ট করলো। কেননা সে তা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক (ﷺ) উনার মুহব্বতের জন্যই করেছে। আর রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, যে ব্যক্তি আমাকে ভালবাসবে সে আমার সাথেই জান্নাতে থাকবে।” সুবহানাল্লাহ্!

[আন নি'মাতুল কুবরা আলাল আলাম ১০ পৃষ্ঠা]

ইমাম ইবন কাসির (রহঃ) তার বিখ্যাত সীরাত গ্রন্থে লিখেন :


ইবলিশ শয়তান জীবনে ঠিক এই সময়টাতেই খুব বেশি কেঁদেছে বা আফসোস করেছে।

أن إبليس رن أربع رنات حين لعن وحين أهبط وحين ولد رسول الله صلى الله عليه وسلم وحين أنزلت الفاتحة

১. আল্লাহ যখন তাকে অভিশপ্ত হিসেবে ঘোষণা দিলেন,

২. যখন তাকে বেহেস্ত থেকে বিতাড়িত করা হল,

৩. নূর নবীজীর (ﷺ) দুনিয়াতে আগমনের সময় এবং

৪. সূরা ফাতিহা নাযিল হবার সময়

[সূত্রঃ ইবন কাসির, আল আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা - ১৬৬]


হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী (রহ) তিনি বলেন-


قَالَ سُلْطَانُ الْعَارِفِيْنَ الْاِمَامُ جَلالُ الدِّيْنِ السُّيُوْطِىُّ قَدَّسَ اللهُ سِرَّهٗ وَنَوَّرَ ضَرِيْحَهُ فِىْ كِتَابِهِ الُمُسَمّٰى الْوَسَائِلِ فِىْ شَرْحِ الشَّمَائِلِ" مَا مِنْ بَيْتٍ اَوْ مَسْجِدٍ اَوْ مَحَلَّةٍ قُرِئَ فِيْهِ مَوْلِدُ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِلا حَفَّتِ الْمَلٰئِكَةُ ذٰلِكَ الْبَيْتَ اَوِ الْمَسْجِدَ اَوِ الْمَحَلًّةَ صَلَّتِ الْمَلٰئِكَةُ عَلٰى اَهْلِ ذٰلِكَ الْمَكَانِ وَعَمَّهُمُ اللهُ تَعَالٰى بِالرَّحْمَةِ وَالرِّضْوَانِ واَمَّا الْمُطَوَقُّوْنَ بِالنُّوْرِ يَعْنِىْ جِبْرَائيلَ وَمِيْكَائِيْلَ وَاِسْرَافِيْلَ وَعَزْرَائِيْلَ عَلَيْهِمُ السَّلامُ فَاِنَّهُمْ يُصَلُّوْنَ عَلٰى مَنْ كَانَ سَبَبًا لِقَرَائَةِ مَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاِذَا مَاتَ هَوَّنَ اللهُ عَلَيْهِ جَوَابَ مُنْكِرٍ وَنَكِيْرٍ وَيَكُوْنُ فِىْ مَقْعَدِ صِدْقٍ عِنْدَ مَلِيْكٍ مُّقْتَدِرٍ.


অর্থ: “যে কোন ঘরে অথবা মসজিদে অথবা মহল্লায় পবিত্র মীলাদুন নবী (ﷺ) উদযাপন করা হয় সেখানে অবশ্যই আল্লাহ পাকের ফেরেশতাগণ বেষ্টন করে নেন। আর তারা সে স্থানের অধিবাসীগণের উপর ছলাত-সালাম পাঠ করতে থাকেন। আর আল্লাহ পাক তাদেরকে [উক্ত লোকসকলকে] স্বীয় রহমত ও সন্তুষ্টির আওতাভুক্ত করে নেন। আর নূর দ্বারা সজ্জিত প্রধান ৪ ফেরেশতা অর্থাৎ হযরত জিবরায়ীল, মীকায়ীল, ইসরাফীল ও আযরায়ীল আলাইহিমুস সালামগণ মীলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপনকারীগণের উপর ছলাত-সালাম পাঠ করেন। যখন তারা [উদযাপনকারীগণ] ইনতিকাল করেন তখন আল্লাহ পাক তাদের জন্য মুনকার-নাকীরের সুওয়াল-জাওয়াব সহজ করে দেন। আর তাদের অবস্থান হয় আল্লাহ পাকের সন্নিধ্যে সিদ্দিকীনদের মাক্বামে।” সুবহানাল্লাহ্!

[ওয়াসিল ফি শরহে শামায়িল, আন নিয়ামাতুল কুবরা আলাল আলাম ১০ পৃষ্ঠা]


ইমাম কসতলানী (রহ) আরও বলেন: ”যাদের অন্তর রোগ-ব্যাধি দ্বারা পূর্ণ, তাদের কষ্ট লাঘবের জন্যে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর মীলাদের মাস (রবিউল আউয়ালের) প্রতিটি রাতকে যাঁরা উদযাপন করেন তাঁদের প্রতি আল্লাহতা’লা দয়াপরবশ হোন!” 

[আল-মাওয়া আল-লাদুন্নিয়া, ১ম খন্ড]


ইমাম সুলতান মোল্লা আলী কারী (রহ) 

[মুহাদ্দিস ও হানাফী ফেকাহবিদ] তিনি বলেন:

আল্লাহতা’লা এরশাদ ফরমান,

আত-তাওবাহ ৯:১২৮

لَقَدْ جَآءَكُمْ رَسُولٌ مِّنْ أَنفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُم بِٱلْمُؤْمِنِينَ رَءُوفٌ رَّحِيمٌ 

তোমাদের কাছে তোমাদের মধ্য থেকেই একজন রসূল এসেছে। তোমরা যাতে কষ্ট পাও তা তার জন্যও কষ্টদায়ক। সে তোমাদের কল্যাণকামী এবং মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল ও দয়ালু।




  কিছু ব্যাক্তি তারা কিভাবে বলে  মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন করা যাবে না

শনিবার, ১০ জুলাই, ২০২১

কোরবানির নিয়ম🐪

 ‌‌‌‌‌            🐪যাদের উপর কোরবানি ওয়াজিব🐪

        ---------------------------------------------------------

কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার জন্য কিছু শর্ত রয়েছে। তা হল—

(১) মুসলিম হওয়া; সুতরাং অমুসলিমদের উপর তা ওয়াজিব নয়।

(২) মুকিম হওয়া; কাজেই মুসাফিরদের উপর কুরবানি ওয়াজিব নয়।

(৩) ধনী হওয়া অর্থাৎ নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া। এখানে এর অর্থ হল, যার উপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হয়, এটা উদ্দেশ্য নয় যে, যার উপর যাকাত ফরজ হয় (অর্থাৎ মাল এক বছর মালিকানায় থাকা এবং শর্ত নয়, বরং ঈদের দিন যদি নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদের মালিক থাকে তবেই তার উপর কুরবানি ওয়াজিব)। যে ব্যক্তি সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা অথবা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণের মালিক কিংবা মৌলিক প্রয়োজন ছাড়া যে ব্যক্তি এ পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়, যার মূল্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা অথবা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণের সমান, তবে  তার উপর কুরবানি ওয়াজিব।

(৪) বালেগ হওয়া; সুতরাং নাবালেগ এর উপর কুরবানি ওয়াজিব নয়,  তবে করলে ভাল। যদি কেউ বালেগ ছেলে অথবা স্ত্রীর পক্ষ হতে কুরবানি করতে চায় তবে তাদের থেকে অনুমতি নেয়া শর্ত। অনুমতি ব্যতীত ওয়াজিব আদায় হবে না। পুরুষ হওয়া শর্ত নয়। সম্পদশালী মহিলাদের উপরও কুরবানি ওয়াজিব হয়, যেমনটি পুরুষের উপর হয়।

(৫) সময় পাওয়া আবশ্যক অর্থাৎ দশ যুলহজ্জ সুবহে সাদিকের পর হতে বার যুলহজ্জ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত তিনদিন দু’রাত। এ দিনসমূহকে কুরবানির। দিন বা আইয়ামুন নাহর বলা হয়।

                           মাসাআলা

মাসআলা-১: শহরে কুরবানি করার বিধান হলো, ঈদের নামাযের পরেই তা করতে হবে নামাযের পূর্বে হবে না। আর গ্রামে কুরবানির জন্য এই শর্ত নেই গ্রামে সুবহে সাদিকের পর থেকেই কুরবানি হয়। কেননা গ্রামে ঈদের নামায নেই।

উল্লেখ্য যে, বর্তমান গ্রামগুলোতে শহরের হুকুমের আওতাভূক্ত।


মাসআলা-২: নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে কুরবানি হবে না। যদি কেউ করে ফেলে কুরবানি হয়নি, আবার কুরবানি করবে। আর সময়ের পরে কুরবানি করলেও কুরবানি হবে না। তবে তখন কুরবানির পশুর মূল্যের সমান সদকা করবে।


মাসআলা-৩: কুরবানির সময় কুরবানি করাই আবশ্যক, অন্যকিছু এর স্থলাভিষিক্ত হবে না। যেমন, কুরবানির পরিবর্তে লাখ টাকা সদকা করে দেয়া প্রভৃতি।

 

মাসআলা-৪: শর্তগুলো নির্দিষ্ট সময়ের পূর্ণ অংশেই পাওয়া জরুরি নয় বরং কুরবানির জন্য যে সময় নির্দিষ্ট করা হয়েছে ঐ সময়ের যে কোন অংশে শর্তগুলো পাওয়া যাওয়াই কুরবানি ওয়াজিব হওয়ার জন্য যথেষ্ট। যেমন, কোন ব্যাক্তি কুরবানির নির্দিষ্ট সময়ের প্রথম দিকে দরিদ্র ছিল এবং কুরবানির দিনসমূহের পরবর্তি যে কোন সময়ে ধনী হয়ে গেল, অনুরূপ :  মুসাফির মুকিম হয়ে গেল, অমুসলিম মুসলিম হয়ে গেল কিংবা নাবালেগ বালেগ হয়ে গেল, তবে তার উপর কুরবানি ওয়াজিব হয়ে যাবে।

        #পশু_কেনার_পর_হারিয়ে_গেলে_এর বিধান🐑


(১)কুরবানির পশু কেনার পর মারা গেছে, তখন ধনী ব্যক্তির উপর আবশ্যক যে অন্য আরেকটি পশু কুরবানি করবে। আর দরিদ্র ব্যক্তির উপর তা ওয়াজিব নয়।

(শামি)


 (২) যদি কুরবানির পশু হারিয়ে যায় বা চুরি হয়ে যায় এবং এর স্থানে অন্য পশু ক্রয় করে ফেলেছে, এমতাবস্থায় হারিয়ে যাওয়া বা চুরি হওয়া পশুটি আবার ফিরে পেয়েছে, তখন ধনী ব্যক্তির এখতিয়ার রয়েছে যে দুটোর মধ্যে যে কোন একটি কুরবানি করবে। আর দরিদ্র ব্যক্তি দুটোই কুরবানি করতে হবে। তবে ধনী ব্যক্তি যদি দ্বিতীয় পশুটিকে কুরবানি করে এবং এর মূল্য প্রথমটি হতে কম হয়, তবে যে মূল্যটা প্রথমটি হতে কম   হয়েছে তা সদকা করে দিতে হবে। কিন্তু প্রথমটিও কুরবানি করে দিলে আর সদকা ওয়াজিব থাকবে না।

(শামি)

                   🐄 কোরবানি করার পদ্ধতি, 🐄

 কুরবানির পশু উল্লেখিত শর্তগুলো মোতাবেক হবে এবং ঐসকল ত্রুটি হতে মুক্ত হবে, যে কারনে কুরবানি নাজায়েজ হয়।

▪ পশু ভাল এবং মোটা-তাজা হবে।

▪ কুরবানি করার পূর্বে পশুকে ঘাস-পানি দিবে, যেন ক্ষুদার্ত ও  পিপাসার্ত অবস্থায় জবাই করা না হয়।

▪ একটি পশুর সামনে অন্যটি জবাই করবে না।

▪ প্রথমে ছুরি ধারালো করে নিতে হবে।

▪ অতপর পশুটিকে বাম পাশে কেবলা মুখী করে শুইয়ে দিবে এবং নিজের ডান পা পশুটির গলার উপর রেখে তারাতারি জবাই করে দিবে।

▪ জবাই করার প্রথমে এ দোয়া পড়ে নিবে—


 اني وجهت وجهي للذي فطر السموات والارض حنيفا وما انا من المشركين. ان صلاتي ونسكي ومحياي ومماتي لله رب العالمين. لاشريك له وبذالك امرت وانا من المسلمين

 

উচ্চারণ: ইন্নী ওয়াজ্জা'হতু ও্যাজুহিয়া লিল্লাযী ফাতারাস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ্বা হানীফা ওয়ামা আনা- মিনাল্ মুশরিকীন। ইন্না ছলা  তী ওয়া নুসুকী ওয়া মা'হ্ইয়া-ইয়া ওয়া মামা-তী লিল্লা-হি রাব্বিল আ- লামীন। লা-শারীকা লাহু ওয়া বিযা-লিকা উমিরতু ওয়া আনা- মিনাল্ মুসলিমীন।


▪ কুরবানি নিজের পক্ষ হতে হলে জবাই করার পর নিমোক্ত এ দোয়াটি পড়বে—


 اللهم تقبل مني كما تقبلت من خليلك ابراهيم عليه السلام وحبيبك سيدنا محمد صلي الله عليه وسلم


উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা তাক্বাব্বাল্ মিন্-নী কামা- তাক্বাব্বালতা মিন খালীলিকা ইবরা-হীমা ‘আলাইহিস্ সালাম, ওয়া হাবীবিকা সায়্যিদিনা মু'হাম্মাদিন্ (ﷺ)। 


 ▪ আর যদি অন্যদের পক্ষ হতে জবাই করা হয় তবে مني (মিন্‌-নী) এর স্থলে من (মিন্) বলে তাদের নাম বলবে।

▪ যতক্ষণ পর্যন্ত পশুটি নিরব ও ঠান্ডা না হয়ে যায় ততক্ষণ পর্যন্ত হাত পা কাটবে না, চামড়া আলাদা করবে না।

                       পশু জবাই মাসআলা_

(১) নিজের কুরবানির পশু নিজ হাতে জবাই করাই উত্তম। অন্যের দ্বারা জবাই করালেও জায়েয হবে, তবে জবাই করার স্থানে উপস্থিত থাকা উত্তম।

(শামি)

(২) জবাই করার সময় ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলতে ভুলে গেলে পরে পড়ে নিবে।

(৩) জবাইকারী ক্বিবলামুখী হয়ে দাঁড়ানো সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। বিনা প্রয়োজনে অন্যদিকে হওয়া মাকরূহ।

(৪) প্রত্যেক মুসলমান নারী-পুরুষ, বালেগ-নাবালেগ, সুস্থ-পাগল, পবিত্র বা অপবিত্র সকলের জন্যই জবাই করা জায়েয। তবে শর্ত হলো, জবাই করার শরয়ি পদ্ধতি জানতে হবে এবং জবাই করার সময় বিসমিল্লাহ পড়তে হবে।

(মালাবুদ্দামিনহু)

(৫) শরয়ি নিয়ম অনুযায়ী জন্তু জবাই করার সময় চারটি রগ কাটতে হয়। শ্বাস নালী, খাদ্য নালী এবং ওহার দুই পাশে দুটি রক্তের মোটা রগসহ কমপক্ষে তিনটি কাটা গেলে খাওয়া হালাল হবে। অথবা উল্লেখিত চার রগের বেশির ভাগ কাটা গেলে জন্তু খাওয়া হালাল হবে অন্যথায় হারাম হবে।

(শামি)

(৬) জবাই করার সময় সম্পূর্ণ গলা কেটে ফেলা মাকরূহ।

(ফাতহুল কাদির)

(৭) কুরবানির জন্তু মেশিন দ্বারা জবাই করা জায়েজ। কিন্তু শর্ত হলো, সুইচ চালু করার সময় বিসমিল্লাহ বলতে হবে এবং উল্লেখিত রগ সমূহ কাটতে হবে।

(৮) জবাই করার সময় জন্তুর গলার উপর পা রাখা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।

(৯) বিসমিল্লাহ পড়ার পর জন্তু পালিয়ে গেলে দ্বিতীয়বার জবাই করতে 'বিসমিল্লাহ্ পড়া ওয়াজিব।

শুক্রবার, ৭ মে, ২০২১

🥀🥀শবে কদ্বর 🥀🥀

              🥀🥀⊕◑◑ শবে ক্বদর ◑◑⊕🥀🥀

        ❤️=========================❤️


'শবে ক্বদর’ মুসলিম  উম্মাহর কাছে অত্যন্ত মহিমান্বিত  একটি রজনীর  নাম। এ   রাতে গভীর আবেগে আপ্লুত     হয়     প্রত্যেকটি  মুমিনের হৃদয়।  বারোটি মাসের দীর্ঘ বিরতির   পরে  পাওয়া এ মহান রজনীতে মহান আল্লাহর করুণা লাভের       আশায়  ব্যাকুল হয়ে       ওঠে       সকল   মুমিন     মুসলমানের      হৃদয়।

নামকরণঃ 

ভারত উপমহাদেশীয় মুসলিম  সমাজে   শবে    কদর   নামটি      অধিক  প্রসিদ্ধ হলেও  এর      আসল        ও       কোরআন      শরিফের  পরিভাষায় এর নাম হলো লাইলাতুল কদর।       শবে       কদর    নামটি ফার্সি  ভাষা     থেকে আগত। আরবি লাইলাতুল আর ফার্সি শব দুটি শব্দের অর্থই রাত। আর কদর শব্দটিও উভয় ভাষাতে অভিন্ন অর্থে ব্যহৃত হয়। আর তা হলো মহান, মর্যাদা, নির্ধারণ করা ইত্যাদি।   এ রাতটির   ইবাদতের  ফজিলত  সীমাহীন  এবং এ      রাতে     মহান আল্লাহ সৃষ্টিকূলের  আগামী    এক  বছরের ভাগ্যলিপি    ফেরেশতাদের     হাতে অর্পণ      করেন           বলে    রাতটির নাম শবে কদর বা লাইলাতুল ক্বদর     করা হয়েছে।


শবে কদরের বৈশিষ্ট্য ও মাহাত্ম্য-

(১) পবিত্র কোরআন নাজিল : 

কদরের রাতে মহান আল্লাহ সর্বপ্রথম পবিত্র কোরআন নাজিল করেন। 

(২) হজরত  মুহাম্মদ   (সা.)-এর রেসালাত অর্জন কুদরতের রাতেই হজরত মুহাম্মদ (সা.) প্রথম ওহি লাভ করেন এবং রেসালাত অর্জন করেন। এরশাদ হয়েছে,‘নিশ্চয়ই আমি ইহা (কোরআন) নাজিল করেছি কদরের রাতে।

(সুরাতুল কদর : ১) 

(৩) হজরত জিবরাঈল ও রহমতের ফিরিশতাদের আগমন : 

হজরত জিবরাঈল (আ.) নবী ও রাসুলদের কাছে ঐশী বাণী নিয়ে পৃথিবীতে আসতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ইন্তেকালের মাধ্যমে নবুয়ত ও রেসালাতের ধারা বন্ধ  হয়ে যাওয়ায় হজরত জিবরাঈলের  পৃথিবীতে আগমনও   বন্ধ  হয়ে গেছে। তিনি বছরে একবার    মাত্র কদরের রাতে  আল্লাহর নির্দেশে  রহমতের একদল     ফেরেশতাকে   সঙ্গে     নিয়ে           পৃথিবীতে  আগমন   করেন।  এরশাদ হয়েছে,‘এ   রাতে   ফিরিশতারা এবং  রূহ (জিবরাইল আ.)   প্রত্যেক  কাজের জন্য তাঁদের পালনকর্তার নির্দেশসহ অবতীর্ণ হন।’ 

(সুরাতুল কদর : ৪) 


(৪) তাকদির লিখন : 

শবে কদরে  সমগ্র  সৃষ্টির  আগামী  এক বছরের  ভাগ্য লিপিবদ্ধ          করা   হয়। অর্থাৎ লওহে মাহফুজ থেকে তা নকল করে ফেরেশতাদের হাতে অর্পণ করা হয়।  সুরাতুল   কদরের   ‘মিন কুল্লি     আমরিন’    অংশের   তাফসিরে কাতাদাহ প্রমুখ মুফাসসিরগণ বলেন, এ রাতে     যাবতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়  এবং মানুষের হায়াত,মউত,রিজিক,দৌলত ইত্যাদি নির্ধারণ করা হয়। 

(ইবনে কাসির) 


(৫) ফিরিশতাদের দোয়া : 

হজরত    ইমাম   শা’বী  (র.)  লিখেছেন,         লাইলাতুল   কদরে     ফেরেশতারা মসজিদবাসী মুমিনদের জন্য শান্তির দোয়া করতে থাকেন। 

(৬) কদরের পূর্ণ রাতটি কল্যাণময় : 

এরশাদ হয়েছে,‘রাতটি ফজর উদিত হওয়া পর্যন্ত কল্যাণময়।’ 

(সুরাতুল কদর : ৫)


শবে কদরের ফজিলত-

লাইলাতুল  কদরের ফজিলত   সম্পর্কে  মহান   আল্লাহ বলেছেন,‘লাইলাতুল কদর   সম্পর্কে  তুমি   কী   জানো?   কদরের  রাত  এক  হাজার  মাস    অপেক্ষা উত্তম।’ 

(সুরাতুল কদর : ২,৩) 


লাইলাতুল  কদরের    ফজিলত   সম্পর্কে  এক      হাদিসে       রাসুলুল্লাহ      (সা.) বলেছেন :  এ মাসে   এমন একটা রাত   আছে যা এক হাজার মাস   অপেক্ষা উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয় সে সত্যিকারের কপাল পোড়া। 

(ইবনে কাসির) 


অর্থাৎ  একটি মাত্র রাত  ‘লাইলাতুল  কদরের’   ইবাদতের সওয়াব একাধারে তিরাশি  বছর ইবাদত   করার  চেয়েও বেশি।   কোরআন  সর্বশেষ  ও  সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি কিতাব।   আসমানি এক শ সহিফা,  চারখানা কিতাবসহ মোট  এক শ  চারটি    কিতাবের     মধ্যে  কোরআনই  সেরা।  কারণ, এই কিতাব     নাজিল হয়েছে   আখেরি নবী,     সর্বশ্রেষ্ঠ নবী,  নবীগণের  ইমাম, রাসুলদের সরদার, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ      মহামানব  হজরত  মুহাম্মাদ    মুস্তফা  আহমদ   মুজতবা (সা.)-এর       প্রতি।      এই   কোরআনের   স্পর্শ     বড়ই       সৌভাগ্যের।     হজরত জিবরাইল  আলাইহিস  সালাম এই  কোরআন   বহন    করেই   ফেরেশতাদের সরদার   হওয়ার গৌরব  লাভ  করেছেন। মরুর দেশ ‘জজিরাতুল আরব’ এই কোরআনের স্পর্শেই পবিত্র আরব ভূমির   সম্মান    লাভ করেছে। অলক্ষুনে  ও দুর্ভোগময় খ্যাত ‘ইয়াসরিব’    এই কোরআনের বরকতেই পুণ্য  ভূমি ‘মদিনা মুনাওয়ারা’র সম্মানে ধন্য হয়েছে। তাগুতের  আখড়া পাপের আকর শিরক ও কুফরের      শীর্ষ     তীর্থস্থান ‘বাক্কা’ এই  কোরআনের তাজাল্লিতে  পবিত্র     মক্কা নগরীতে   রূপান্তরিত  হয়েছে।   এই কোরআনের    পরশে   স্বল্পমূল্য কাপড়ের ‘গিলাফ’   বুকে জড়ানোর সম্মান  পাচ্ছে।    এই   কোরআনের ছোঁয়ায়  সাধারণ কাঠের ‘রেহাল’ সম্মানের চুমু পাচ্ছে। সর্বোপরি কোরআনের সংস্পর্শে একটি সাধারণ  রাত    ‘লাইলাতুল কদর’  বা ‘শবে কদর’   রজনীর সম্মানে বিভূষিত হয়েছে। কোরআনের  সঙ্গে যার      যতটুকু  সম্পর্ক   ও  সংস্পর্শ   থাকবে, তিনি ততটুকু    সম্মানিত      ও  মর্যাদার   অধিকারী      হবেন।   প্রিয়   হাবিব       সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া   সাল্লাম বলেন, ‘কোরআনওয়ালাই  আল্লাহওয়ালা  এবং  তাঁর খাস ব্যক্তি। 

(বুখারি শরিফ)। 


‘যার  অন্তরে     কোরআনের    সামান্যতম অংশও নেই,   সে    যেন এক  বিরান বাড়ি।’ 

(বুখারি ও মুসলিম শরিফ)


সমস্ত কল্যাণ থেকে কে বঞ্চিত?

হযরত সায়্যিদুনা  আনাস  ইবনে মালিক  رَضِىَ  اللهُ تَعَالٰى      عَنْهُ  বলেন, “যখন   একবার মাহে রমযান তাশরীফ   আনলো    তখন তাজেদারে মাদীনা, সুরুরে  কলবো সীনা হযরত মুহাম্মদ ﷺ      ইরশাদ      ফরমান,  “তোমাদের নিকট একটি  মাস  এসেছে, যাতে  একটি     রাত এমনও রয়েছে,   যা   হাজার মাস  অপেক্ষাও  উত্তম।  যে    ব্যক্তি এ  রাত থেকে বঞ্চিত   রইলো, সে যেনো সব কিছু   থেকে  বঞ্চিত রইলো। আর এর     কল্যাণ    থেকে  যে বঞ্চিত  থাকে একমাত্র সেই প্রকৃতপক্ষে বঞ্চিত।”

 (সুনানে ইবনে মাজাহ, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ২৯৮, হাদীস নং ১৬৪৪)


শবে ক্বদর কোন রাতে-

শবে      কদর     কোন    রাত?   এ সম্পর্কে       অনেক  মতানৈক্য    রয়েছে।      তবে অধিকাংশ  মুহাক্কিক  এর মতো  হলো,মাহে  রমজানের    শেষ দশ  দিনের যে কোনো বেজোড় রাতে  শবে কদর হতে  পারে।  রাসুলুল্লাহ   (সা.) বলেছেন   : তোমরা রমজান মাসের শেষ দশ দিনে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করো 

(সহিহ     আল-বোখারী   :    ২০১৭,  সহিহ  মুসলিম : ১১৬৭,   ইবনে  মাজা : ১৭৬৬, সুনানে আবু দাউদ : ১৩৮১, মুসনাদে আহমাদ : ২৫৬৯০)


এ রাতগুলো হলো  ২১, ২৩, ২৫,  ২৭ ও  ২৯। মনে রাখতে  হবে, আরবিতে দিনের আগে রাত গণনা করা হয়।

মুহাক্কিকগণ    বলেন, আরবিতে  ‘লাইলাতুল    কদর’ শব্দদ্বয়ে নয়টি হরফ  বা আরবি  বর্ণ  রয়েছে;      আর  সুরা  কদরে ‘লাইলাতুল কদর’ শব্দদ্বয়   তিনবার রয়েছে; নয়কে তিন দিয়ে গুণ করলে সাতাশ হয়,  তাই  সাতাশে রমজানের রাতে শবে কদর হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। 

(তাফসিরে মাযহারি)


শবে ক্বদরের আমল-

শবে কদরের আমল হলো: 

ক. নফল নামাজ-

[১] তাহিয়্যাতুল অজু, 

[২] দুখুলিল মাসজিদ, 

[৩] আউওয়াবিন, 

[৪] তাহাজ্জুদ, 

[৫] সালাতুত তাসবিহ 

[৬] তাওবার নামাজ, 

[৭] সালাতুল হাজাত, 

[৮] সালাতুশ শোকর ও অন্যান্য নফল ইত্যাদি পড়া। 

খ. নামাজে কিরাত ও রুকু-সেজদা দীর্ঘ করা। 

গ. কোরআন শরিফ- 

[১] সুরা কদর, 

[২] সুরা দুখান, 

[৩] সুরা মুযযাম্মিল,

[৪] সুরা মুদ্দাচ্ছির, 

[৫] ইয়া-সিন, 

[৬] সুরা ত-হা, 

[৭] সুরা আর রহমান ও অন্যান্য ফজিলতের সুরাসমূহ তিলাওয়াত করা; 

ঘ. দরুদ শরিফ বেশি বেশি পড়া; 

ঙ. তাওবা-ইস্তিগফার অধিক পরিমাণে করা; 

চ. দোয়া-কালাম, তাসবিহ-তাহলিল, জিকির-আজকার ইত্যাদি করা; 

ছ. কবর জিয়ারত করা; 

জ.      নিজের   জন্য, পিতা-মাতার    জন্য,    আত্মীয়স্বজন,   বন্ধুবান্ধব    ও    সব মোমিন মুসলমানের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং দেশ ও জাতির কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনায় দোয়া করা।


ইতিকাফের উদ্দেশ্যে-

ইতিকাফের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো শবে কদর প্রাপ্তি; রমজানের শেষ দশক ইতিকাফ করলে  শবে  কদর প্রাপ্তি  প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায়।  ইতিকাফের  মূল কথা  হলো  সবকিছু    ছেড়ে     আল্লাহর সান্নিধ্যে    চলে    যাওয়া। হজরত      আবু হুরায়রা    (রা.)  বর্ণনা করেন,    রাসুলুল্লাহ   (সা.)   বলেন: যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের  নিয়তে কদরের রাত  জেগে ইবাদত  করবে, তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। 

(বুখারি    শরিফ,    ইমান    অধ্যায়,    পরিচ্ছেদ:  ২৫,  খণ্ড:   ১,    পৃষ্ঠা ২৯-৩০, হাদিস: ৩৪)


শবে ক্বদরের দোয়া-

হজরত     আয়েশা     (রা.)    একটি  হাদিস       বর্ণনা   করেছেন।  তিনি       একবার রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে  জিজ্ঞাসা করেছিলেন, হে   আল্লাহর রাসুল!  শবে কদর কোন রাত   সেটা    যদি  আমি    বুঝতে  পারি  তাহলে  আমি তাতে   কি    দোয়া করব?  তখন   রাসুলুল্লাহ   (স.)  বললেন,    তুমি   বলবে ,   'আল্লাহুম্মা  ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি’, 

অর্থাৎ  হে আল্লাহ!  তুমি  ক্ষমাশীল, তুমি   ক্ষমা   করতে ভালোবাসো অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। 

(জামে            আত্-তিরমিজি      :     ৩৫১৩,     সুনানে      ইবনে  মাজা   :     ৩৮৫০, আস্-সুনানুল    কুবরা   :  ৭৬৬৫,   মুসনাদে আহমাদ    :      ২৫৩৮৪, বায়াকি- শুআবুল ইমান : ৩৪২৬)


==========================

রবিবার, ১১ এপ্রিল, ২০২১

রামাদ্বান মোবারকের ফজিলত

             রমজান ও এ মাসে রোজা রাখার ফজিলত 

                ==========================


শয়তানকে জিঞ্জিরায় বন্দী করা হয় 

হযরত    সায়্যিদুনা  আবু  হুরাইরা(রাদ্বিআল্লাহ্  তা'আলা      আনহু) ইরশাদ করেন, হুজুর  আকরাম    হযরত    মুহাম্মদ  (সাল্লাল্লাহু আলাইহি   ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ  করেছেন,  যখন রমযান   মাস আসে তখন আসমানের  দরজা   খুলে দেয়া হয়।

(বুখারী শরীফ, খন্ড-১ম, পৃষ্ঠা ৬২৬,হাদীস নং-১৮৯৯)


★   অন্য এক  বর্ণনায়   আছে    যে,      জান্নাতের দরজা  খুলে   দেয়া  হয়  এবং জাহান্নামের    দরজা বন্ধ করে দেয়া   হয়,  শয়তানকে শিকলে  বন্দী করা হয়। অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, রহমতের দরজা খুলে দেয়া হয়।

(সহীহ মুসলিম, পৃ-৫৪৩,হাদীস নং-১০৭৯)।


রোযা রাখার ফযিলতঃ


১) রোযার পুরস্কার আল্লাহ স্বয়ং নিজে প্রদান করবেনঃ হাদীসে কুদসীতে রাসূল সাল্লাল্লাহু  আলাইহি   ওয়া সাল্লাম   বলেন,  “আল্লাহ   তায়ালা  বলেছেন,  বনী আদমের    সকল আমল তার  জন্য,       অবশ্য রোযার কথা   আলাদা, কেননা রোযা আমার জন্য এবং আমিই এর পুরস্কার দিব।’’ 

(সহীহ বুখারী,     হাদীস  নং ১৮০৫,   ৫৫৮৩ ও   সহীহ  মুসলিম, হাদীস    নং ২৭৬০)


২) রোযা রাখা গোনাহের কাফফারা স্বরূপ এবং ক্ষমালাভের কারণ:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, 


‘‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে  সাওয়াবের আশায় রামাদান মাসে রোযা রাখবে,  তার পূর্বের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।’’ 

(সহীহ বুখারী,  হাদীস নং ১৯১০ ও সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮১৭)


৩) রোযা জান্নাত লাভের পথঃ

রাসূলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, 

“জান্নাতে একটি দরজা রয়েছে যাকে বলা হয় ‘রাইয়ান’। কিয়ামতের দিন এ দরজা   দিয়ে রোযাদারগণ প্রবেশ করবে।  অন্য   কেউ  এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে   পারবে     না।   রোযাদারগণ প্রবেশ করলে   এ দরজা বন্ধ  হয়ে     যাবে। ফলে আর কেউ সেখান দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।’’ 

(সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৭৯৭ ও সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭৬৬ ) 


রাসূলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

‘‘যার ৪) রোযাদারের জন্য রোযা শাফায়াত করবেঃ

উত্তমসনদে    ইমাম আহমাদ      ও     হাকেম বর্ণনা  করেন        যে,      রাসূল  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া  সাল্লাম বলেছেন,  ‘‘রোযা     এবং  কুরআন   কিয়ামতের    দিন বান্দার জন্য   শাফায়াত  করবে।   রোযা বলবে, হে রব!   আমি   তাকে দিবসে পানাহার    ও কামনা    চারিতার্থ  করা   থেকে নিবৃত্ত   রেখেছি।   অতএব,      তার ব্যাপারে আমাকে শাফায়াত করার অনুমতি দিন।’’ 

(মুসনাদ, হাদীস নং ৬৬২৬, আল-মুস্তাদরাক, হাদীস নং ২০৩৬) 


৫)রোযাদারের     মুখের  দুর্গন্ধ    আল্লাহর  কাছে    মিসকের                  সুগন্ধির  চেয়েও উত্তমঃ

হাতেমুহাম্মাদের   প্রাণ    তার   শপথ!    রোযাদারের      মুখের গন্ধ     কিয়ামতের   দিন আল্লাহর কাছে মিসকের চেয়েও সুগন্ধিময়।’’ 

(সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৯৪ ও সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭৬২)


৬) রোযা ইহ-পরকালে সুখ-শান্তি লাভের উপায়ঃ

রাসূলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

‘‘রোযাদারের জন্য দু’টো খুশীর সময় রয়েছে। একটি হলো ইফতারের সময় এবং অন্যটি স্বীয় প্রভু আল্লাহর সাথে মিলিত হওয়ার সময়।’’ 

(সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮০৫ ও সহীহ মুসলিম, হদীস নং ২৭৬৩) 


৭) রোযা জাহান্নামের অগ্নি থেকে মুক্তি লাভের ঢালঃ

রাসূলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, 

‘‘যে ব্যক্তি  আল্লাহর রাস্তায়  একদিন   রোযা রাখে,   আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে সত্তর বৎসরের দূরত্বে নিয়ে যান।’’ 

(সহীহবুখারী, হাদীস নং ২৬৮৫ ও সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭৬৭ ) 


৮) রোযা ঢালস্বরুপঃ

ইমাম আহমাদ বিশুদ্ধ  সনদে বর্ণনা করেন  রাসূল   সাল্লাল্লাহু   আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

‘‘রোযা  ঢাল    স্বরুপ।  যা দ্বারা  বান্দা  নিজেকে    আল্লাহর  আযাব   থেকে রক্ষা করতে পারে, যেভাবে তোমাদের কেউ একজন যুদ্ধে নিজেকে রক্ষা করে।’’ 

(মুসনাদ, হাদীস নং ১৭৯০৯)


৯)জাহান্নামের              অগ্নি     থেকে    সত্তর             বছরের     রাস্তা       পরিমাণ      দূরবর্তী হওয়াঃ

রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

‘‘যে কেউ আল্লাহর     রাস্তায়       (অর্থাৎ শুধুমাত্র আল্লাহকে   খুশী  করার জন্য) একদিন  সিয়াম  পালন  করবে,   তা  দ্বারা    আল্লাহ     তাকে জাহান্নামের অগ্নি থেকে সত্তর বছরের রাস্তা পরিমাণ দূরবর্তীস্থানে রাখবেন’’।

[সহীহ মুসলিম : ২৭৬৭]


১০) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

‘যে লোক  ন্যায়  সঙ্গত কারণ ছাড়া রমজানের একটি  রোজা ভেঙে ফেলবে, এরপর সে সারাজীবন রোজা রাখলেও তার ক্ষতি পূরণ হবে না’।

 ★ তিরমিজী,

 ★ নাসায়ী,

 ★ ইবনে মাজাহ,

 ★ ইবনে খুজায়মাহ


রোজাদারের মর্যাদা ও রমজানের রোজা রাখার ফজীলত 

==========================


১. রোজার প্রতিদান  আল্লাহপাক নিজেই  দেবেন এবং বিনা হিসাবে  প্রত্যেক নেক   আমলের   নির্ধারিত   সওয়াব ও  প্রতিদান   রয়েছে  যার মাধ্যমে আল্লাহ পাক  আমলকারীকে পুরস্কৃত করবেন। কিন্তু রোজারবিষয়টি  সম্পূর্ণ  আলাদা। কারণ রোজার বিষয়ে আছে আল্লাহর পক্ষ থেকে এক অনন্য ঘোষণা।

হযরত আবু  হুরায়রা   রাঃ    থেকে    বর্ণিত রাসুলুল্লাহ  (সাঃ) বলেন,   মানুষের প্রতিটি   আমলের  প্রতিদান    বৃদ্ধি      করা  হয়।  একটি নেকির সওয়াব  দশগুণ থেকে সাতশ’ গুণ পর্যন্ত হতে পারে।  আল্লাহ তায়ালা  বলেন,    কিন্তু   রোজার বিষয়টা আলাদা।  কেননা তা আমার  জন্য এবং  আমি নিজেই     এর বিনিময় প্রদান  করবো। বান্দা একমাত্র আমার জন্য নিজের প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং পানাহার পরিত্যাগ করেছে।


১. সহীহ মুসলিম ১১৫১

২. মুসনাদে আহমাদ ৯৭১৪


আল্লাহ তায়ালা রোজাদারদের কিয়ামতের দিন পানি পান করাবেন

হযরত আবু   মুসা  (রাঃ)   থেকে        বর্ণিত,  আল্লাহ         তায়ালা    নিজের   উপর অবধারিত    করে          দিয়েছেন   যে  ব্যক্তি   আল্লাহর  সন্তুষ্টির  জন্য   গ্রীষ্মকালে (রোজা   রাখার     কারণে)   পিপাসার্ত      থেকেছে,    তিনি  তাকে   তৃষ্ণার        দিন (কিয়ামতের দিন) পানি পান করাবেন।


৩ রোজা জান্নাত লাভে পথ

হযরত      আবু   ওমামা  রাঃ হতে  বর্ণিত,  আমি রাসুলুল্লাহ’র   (সাঃ)   দরবারে গিয়ে বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ, আমাকে এমন একটি আমল বলে দিন যার দ্বারা আমি   জান্নাতে  প্রবেশ  করতে   পারি।    রাসুলুল্লাহ বললেন,  তুমি রোজা রাখ। কেননা এর সমতুল্য কিছু নেই। আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম। রাসুল (সাঃ) জবাব দিলেন, তুমি রোজা রাখ। 

(মুসনাদে আহমাদ ২২১৪৯)


৪ রোজাদার বেহেস্তে প্রবেশ করবেরাইয়ান নামক বিশেষ দরজা দিয়ে

হযরত   সাহল   ইবনে সা’দ রাঃ   হতে বর্ণিত, নবী (সাঃ) বলেছেন,   জান্নাতে একটি দরজা   আছে  যার  নাম   রাইয়ান।   কিয়ামতের  দিন এ  দরজা        দিয়ে কেবল  রোজাদারগণ   প্রবেশ করবেন।  অন্য কেউ প্রবেশ    করতে পারবে  না। ঘোষণা করা হবে কোথায় সেই সৌভাগ্যবান রোজাদারগণ? তখন তারা উঠে দাঁড়াবে।   তারা    ব্যতীত  কেউ এ   দরজা    দিয়ে প্রবেশ     করতে     পারবে    না। অতঃপর রোজাদারগণ যখন  প্রবেশ করবে, তখন তা বন্ধ করে দেওয়া হবে। ফলে কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।

১. সহীহ মুসলিম ১১৫২

২. মুসনাদে আহমাদ ২২৮১৮


৫. রোজা জাহান্নাম থেকে রক্ষাকারী ঢালও দুর্গ

হযরত  জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত,   রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,   রোজা  হলো (জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ লাভের) ঢাল ও সুরক্ষিত দূর্গ।

(মুসনাদে আহমাদ ৯২২৫)


৬ রোজ কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবে

হযরত  আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ)  বর্ণিত,   রাসুল (সাঃ) বলেছেন, রোজা ও কুরআন কিয়ামতের  দিন বান্দার জন্য  সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে রব, আমি তাকে খাদ্য ও যৌন  সম্ভোগ থেকে  বিরত  রেখেছি। অতএব  তার ব্যাপারে আমার   সুপারিশ  গ্রহণ করুন।  কুরআন বলবে, আমি তাকে রাতের ঘুম     থেকে   বিরত      রেখেছি। অতএব  তার   ব্যাপারে আমার সুপারিশ   গ্রহণ করুন।

রাসুল (সাঃ) বলেন, অতঃপর তাদের উভয়ের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। 

(মুসনাদে আহমাদ ৬৬২৬)


৭ রোজাদারের সকল গুনাহ মাফ হয়ে যায়

হযরত          আবু হুরায়রা রাঃ বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ  (সাঃ)  বলেছেন,      যে   ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমজান মাসের  রোজা  রাখে তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয়। 

(সহীহ বুখারি ২০১৪)


৮ রোজাদারের মুখের গন্ধ মিশকেরচেয়েও সুগন্ধিযুক্ত

হযরত আবু হুরায়রা  রাঃ  বর্ণিত, রাসুল (সাঃ) বলেছেন,  শপথ  সেই সত্ত্বার যার হাতে রয়েছে মুহাম্মদের প্রাণ, রোজাদারের মুখের  গন্ধ আল্লাহতায়ালার কাছে মিশকের সুগন্ধির চেয়েও অধিক সুগন্ধিময়। 

(সহীহ বুখারি ১৯০৪)

৯ রোজাদারের দুটি আনন্দের মুহূর্ত

হযরত   আবু হুরায়রা রাঃ বর্ণিত, নবীজী (সাঃ) বলেছেন,  রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দের মুহূর্ত রয়েছে। যখন সে আনন্দিত হবে-

এক. ইফতারের সময়। তখন সে ইফতারের কারণে আনন্দ পায়।

দুই. যখন সে তার রবের সঙ্গে সাক্ষাত লাভ করবে তখন তার আনন্দ হবে।

অপর এক বর্ণনায় এসেছে, যখন তার প্রতিপালক রোজার পুরস্কার দিবেন।

(সহীহ মুসলিম ১১৫১)


১০ রোজাদারের দুয়া কবুল হয়

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী (সাঃ) ইরশাদ করেন, ইফতারের  সময়   রোজাদার      যখন  দুয়া     করেন তখন   তার   দুয়া    ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। (অর্থাৎ দুয়া কুবল কর হয়) 

(সুনানে ইবনে মাজাই ১৭৫৩)

==========================

তথ্যসূত্র --  ফযায়েলে রামযান

#ইসলামী বিশ্বকোষ এ্যপ্স।

ডাউনলোড করুন ইসলাম সম্পর্কে জানুন


শনিবার, ২৭ মার্চ, ২০২১

            ◑ ___লাইলাতুন নিসফ্ মিন শাবান____◑

     মুহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন রাকিব   


লাইলাতুন নিসফ্ মিন শা'বান অর্থ মধ্য শবানের রাত। বাংলাদেশ -ভারত ও পাকিস্তান এতদঞ্চলে এ রাত শবে বরাত নামে পরিচিত। কারণ আরবি ভাষাভাষী না হওয়ার কারণে আমরা এ অঞ্চলের মুসলমাদের ধর্মীয় ক্ষেত্রে শব্দের ব্যবহার ঊর্দু-ফারসির একটা প্রভাব লক্ষণীয়।  যেমন সালাতকে নামায, সাওমকে রোযা বলে থাকি। লাইলাতুন নিসফ্ মিন শা'বানকে শবে বরাত বলার কারণে এর মযার্দার কোন তারতম্য হবে না। 

     হাদিস শরীফে লাইলাতুন নিসফ্ মিন শাবান


শাবানের যে কি বাহার! কি যে আলোচনা করব। স্বয়ং রাসূলে পাক ﷺ ইরশাদ করেন, শাবান আমার মাস আর রমযান আল্লাহর মাস।

 [আল জামেয়ুল সগীর, ৩০১ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৪৮৮৯।] 


সায়্যিদাতুনা আয়েশা সিদ্দিকা রা. একদিন রাসূলে কারীমকে ﷺ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ ﷺ! সকল মাসের চেয়ে কি আপনার নিকট শাবনের রোযা রাখা অধিক প্রিয়? রাসূলে কারীম ﷺ ইরশাদ করলেন, আল্লাহ তায়ালা এই বৎসরে সকল মৃত্যুবরণকারীদের নাম এই মাসে লিখে দেন এবং আমি পছন্দ করি যে যখন আমার বিদায়ের সময় আসবে তখন যেন আমি রোযা অবস্থায় থাকি। অর্থাৎ রাসূলে কারীম ﷺ সম্পূর্ণ শাবান মাসে রোযা রাখতেন। 

[মুসনাদে আবু ইয়ালা, ৪র্থ খন্ড, ২৭৭ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৪৮৯০]



১৫ ই শাবানুল মুয়াজ্জামের রাত্রিটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ব্যপারে গুনিয়াতুত তালাবীনে আছে, অনেক কাফন ধুয়ে তৈরী করে রাখা হয় কিন্তু পরিধানকারীরা রাস্তায়-বাজারে ঘুরাফেরায় রত থাকে। কত কবর খনন করা হয় কিন্তু যারা দাফন হবে তারা হাসি-খুশিতে বিভোর থাকে। বহু দালানের নির্মাণ কাজ পূর্ণ হতে চলছে এদিকে দালানের মালিকেরও মৃত্যুর সময় পূ্র্ণ হতে চলছে।

[গুনিয়াতুত তালিবীন, ১ম খন্ড, ৩৪৮ পৃষ্ঠা]  আল্লাহু আকবার!


সায়্যিদুনা আলিউল মুরতাদ্বা রা. থেকে বর্ণিত রাসূলে কারীম ﷺ ইরশাদ করেন, যখন শাবানের ১৫ তম রাত আসে তখন রাতে কিয়াম করো আর দিনে রোযা রাখ। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা সূর্যাস্থের পর থেকে প্রথম আসমানে বিশেষ তাজাল্লী বর্ষণ করেন। আর বলতে থাকেন, কে আছ আমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনাকারী! আমি তাকে ক্ষমা করে দিব। কেউ আছ কি জীবিকা প্রার্থনাকারী আমি তাকে জীবিকা দিব।

কেউ আছ কি মুসিবতগ্রস্থ আমি তাকে উদ্ধার করব। কেউ আছ কি! কেউ আছ কি! সূর্য উদয় হওয়া পর্যন্ত এরুপ বলতে থাকেন। [সুনানে ইবন মাযাহ, ২য় খন্ড, ১৬০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-১৩৮৮]

আল্লাহ আকবার। স্বয়ং রব তায়ালার রহমতের ডাক আসছে আর আপনি ইবাদত না করে ঘুমিয়ে কাটাবেন এই মহান রাত্রিটি? এটা হতে পারে না। তবে কিছু হতভাগা এমন আছে যারা এই রাত্রিতেও ক্ষমা পাবে না!


এই রাতটি খুবই মহান। তাই অলসতা করে কাটানো উচিত নয়। এই রাতে আল্লাহ তায়ালা বনি কালব গোত্রের ছাগলের পশমের চেয়েও অধিক পরিমাণ ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দেন। কিতাবে আছে বনি কালব গোত্রটি আরবের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছাগল পালন করত। তবে রাসূলে কারীম ﷺ ইরশাদ করেন, ৬ প্রকারের ব্যক্তিকে এ রাতেও ক্ষমা করা হয় না। 

মদ্যপানে অভ্যস্থ, পিতা-মাতার অবাধ্য, ব্যাভিচারী, চুগলখোর, ছবি প্রস্তুতকারী, আত্নীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী। [ফাযায়েলুল আওকাত, ১ম খন্ড, ১৩০ পৃষ্ঠা, ২৭ নং হাদীস। ]

অনুরুপভাবে যাদুকর, গণক, মুসলমানদের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারী, অহংকার সহকারে কাপড় বা পায়জামা গোড়ালির নিচে ঝুলিয়ে পরিধানকারীদের ব্যপারেও সতর্কতা আছে।

আল্লাহ যেন এসব গুণাহ থেকে আমাদের মেহফুজ রাখেন।

 হযরত আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত,রাসূল(সঃ) ইরশাদ করেন,যখন শাবানের ১৪তারিখ আসবে,সো রাতে তোমরা কিয়াম করবে নামায বন্দেগীতে কাটাবে এবং দিনে রোযা রাখবে।

(ইবনে মাজাহ্১/৪৪৪ : হাদীস ১৩৮৮)(ইমাম বায়হাকী:শুয়াবুল ইমান:৫\৩৫৪ পৃ:হাদীস„৩৮২২)


হয়রত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর(রাঃ) হতে বর্ণিত,  রাসূল(সঃ) ইরশাদ করেন,৫রাত্রি দোয়া আল্লাহ্ ফেরত দেননা। ১জুমার রাত্র,২রজবের ১ম রাত্র,৩শাবানের ১৫তারিখ রাত(শবে বরাত) ৪-৫দু-ঈদের রাত।

(ইমাম আব্দুল রায়্য়াক:আল মুসান্নাফ:৪\৩১৭,পৃ:হা: ৭৯২৭)(ইমাম বাজ্জার:আল মুসনাদ:হা:৭৯২৭)

(সূয়ুতি:জামেউস সগীর:১\৬১০:হা:৮৩৪২,মুয়ায বিন জাবাল(রাঃ)এর সূত্র।)


#হযরত আবু ছালাবাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত,  প্রিয় নবী(সঃ) ইরশাদ করেন, আল্লাহ্ স্বীয় বান্দাদের প্রতি শা'বানের মধ্য রজনীতে(শবে বরাত) করুণা ভরা হৃদয়ে ক্ষমার দৃষ্টিতে তাকান,ফলে মুমিনদের ক্ষমা করে দেন এবং কাফিরদেরকে ইমান আনার সুযোগ দেন,আর হিংসুকদেরকে তাদের হিংসার মাঝে ছেড়ে দেন,যতক্ষণ না তারা তাদের হিংসা বিদ্বেষ ত্যাগ করে।

(ইমাম মুনযিরী:আত-তারগীব ওয়াত তারহীব:৪\২৪০:হা:২২)

(ইবনে হাজার হায়সামী : মাযামাউয যাওয়াইদ :৮\৬৫পৃ:হা:১২৯৬২)


#হযরত আতা ইবনে ইয়াসার (রাঃ) হতে বর্ণিত,রাসূল(সঃ) ইরশাদ করেন,শা'বানের মধ্য রজনীতে আয়ু নির্ধারণ করা হয়।ফলে দেখা যায় কেউ সফরে বের হয়েছে অথচ তার নাম মৃতদের তালিকায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে, আবার কেউ বিয়ে করছে অথচ তার নাম জীবিতের খাতা থেকে মৃত্যুর খাতায় লিখা হয়ে গেছে।  

       (ইমাম বাযযার :আল মুসনাদ :৩পৃ_১৫৮হাদিস :৭৯২৫)( ইবনে রাহবিয়্যাহ,মুসনাদ,৩\৯৮১,১৭০২)

 পবিত্র রাত্রিটিতে বেশি বেশি ইবাদত করার তৌফিক দেন।

বুধবার, ১০ মার্চ, ২০২১

           মিরাজ শরীফের সূচনা

             =================


রজনী দ্বিপ্রহর।ঘন অন্ধকারে আকাশ আচ্ছন্ন। নিস্তব্ধ নির্জন চারদিক।একটা অস্বাভাবিক গাম্ভীর্যে প্রকৃতি স্তব্ধ হয়ে আছে।সৃষ্টির সেরা মাহবুবে মতলক নূরনবী হযরত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা’বা গৃহের চত্বরে ঘুমিয়ে আছেন। এমন সময় তিনি শুনতে পেলেন কে যেন তাঁকে ডাকছে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! এতে মাহবুবে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘুম ভেঙে গেল। জেগে দেখলেন, হযরত জিব্রাইল আলাইহিস সালাম শিয়রে দণ্ডায়মান। অদূরে ‘বোরাক’ নামক একটি অদ্ভূত জ্যোতির্ময় বাহন অপেক্ষা করছে। ডানা বিশিষ্ট অশ্বের মত রূপ, ক্ষিপ্র তার গতিবেগ।) মি’রাজ প্রসঙ্গে আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লাহ শানুহু কালামে পাকের পনেরো পারা সূরায়ে বনী ইসরাইল প্রথম রুকুর মধ্যে এরশাদ করেন-


سبحان الذى اسرى بعبده ليلا من المسجد الحرام الى المسجد الاقصى الذى باركنا حوله لنريه من ايتنا انه هو السميع البصير- আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেজা খাঁন আলাইহির রহমত ‘কানযুল ঈমান’ নামক কিতাবে উপরোক্ত আয়াতে কারিমার উর্দু তরজমা করেছেন-


پاکی ہے اسے جو اپنے بندے کو راتوں رات لے گیا مسجد حرام سے مسجد اقصا تک جس کے گرد اگرد ہم نے برکت رکھی کہ ہم اسے اپنی عظیم نشانیاں دکھائیں بیشک وہ سنتا دیکھتا ہے- 


তরজমা- পবিত্রতা তাঁরই (আল্লাহরই) জন্য। যিনি আপন বান্দাকে, রাতারাতি নিয়ে গেছেন, মসজিদে হারাম হতে মসজিদই আকসা পর্যন্ত, যার আশেপাশে আমি বরকত রেখেছি, যাতে আমি তাঁকে আপন মহান নিদর্শনসমূহ দেখাই। নিশ্চয় তিনি শুনেন, দেখেন।’ চতুর্দশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ইমাম আহমদ রেজা খাঁন বেরলভী আলাইহির রহমত এর তরজমাই কুরআন ‘কানযুল ঈমান’ নামক কিতাবের তাফসির (হাশিয়া) ‘খাযাইনুল ইরফান’ নামক কিতাবে সদরুল আফাজিল আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ নঈম উদ্দিন মুরাদাবাদী আলাইহির রহমত উপরোক্ত আয়াতে কারিমার তাফসিরে উল্লেখ করেন- ‘সূরায়ে বনী ইসরাইল। এ সূরা মোবারকের অপর নাম ‘সূরা ইসরা এবং সূরায়ে সুবহানও বলা হয়ে থাকে। سبحان আল্লাহতা’য়ালার সত্ত্বা সর্বপ্রকার দোষ-ত্রুটি অক্ষমতা দূর্বলতা থেকে একেবারেই পূতঃপবিত্র। সেই আল্লাহ তাঁর মাহবুব মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মি’রাজের রাত্রিতে মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত নিয়ে গেলেন। যার দূরত্ব চল্লিশ মনজিল, অর্থাৎ সোয়া এক মাসেরও অধিক পথ। শানে নুযুল: যখন কুল কায়েনাতের সরদার মাহবুবে মতলক হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মি’রাজের রাত্রে সর্বোচ্চ মর্যাদা ও উন্নত স্তরসমূহে উপনীত হলেন, তখন কুল কায়েনাতের স্রষ্টা আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা সম্বোধন করলেন- ‘হে মুহাম্মদ! (মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ সকল মর্যাদা ও সম্মান আমি আপানাকে কেন দান করছি? উত্তরে মাহবুবে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরজি পেশ করলেন, এজন্য যে, আপনি আমাকে عبديت আবদিয়ত সহকারে (আপনার মাহবুব বান্দা হিসেবে) নিজের দিকে সম্পৃক্ত করেছেন।’ এ প্রসঙ্গে এ বরকতময় আয়াতে কারিমা অবতীর্ণ হয়েছে। (খাযিন) الذى بركنا حوله لنريه من ايتنا (যাতে আমি তাঁকে আপন মহান নিদর্শনসমূহ দেখাই) ধর্মীয় ও পার্থিব উভয় প্রকারের নিদর্শন। কেননা মসজিদে আকসা হলো পবিত্র ভূমি, আল্লাহতা’য়ালার পক্ষ থেকে ওহি অবতরণ স্থল, নবীগণ আলাইহিমুস সালাম এর ইবাদতের স্থান, তাঁদের অবস্থান স্থল এবং ইবাদতের কিবলা। এতদ্ব্যতীত অসংখ্য নদী, নহর ও গাছপালা দ্বারা ঐ ভূমি সবুজ-সজিব এবং ফল-মূলের আধিক্যের কারণে সুখ-স্বাচ্ছন্দের উত্তম স্থান। মি’রাজশরীফ ছরকারে কায়েনাত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক অনন্য মু’জিযা ও আল্লাহ জাল্লা শানুহুর এক মহান অনুগ্রহ। এ থেকে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এমন পরিপূর্ণ নৈকট্যপ্রাপ্তির শান প্রকাশ পায়, যা আল্লাহতা’য়ালার কুল কায়েনাতের সৃষ্টিজগতে মাহবুবে মতলক নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত অন্য কারো ভাগ্যে অর্জিত হয়নি। নবূয়তের দ্বাদশ সালে ছরকারে কায়েনাত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মি’রাজ এর মত অনন্য মু’জিযা দ্বারা ধন্য হয়েছেন। মাস সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে, কিন্তু প্রসিদ্ধতম অভিমত হচ্ছে- ২৭ রজব নূরনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মি’রাজশরীফ হয়েছিল। নূরনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মি’রাজশরীফ জাগ্রত অবস্থায় শরির মোবারক ও রূহ মোবারক সহকারে সংঘটিত হয়েছে। অধিকাংশ মুসলমানগণের আকিদা বা দৃঢ় বিশ্বাস ইহাই। রাসূলে করিম রাউফুর রাহীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জলিল কদর সাহাবিদের মধ্যে এক বিরাট দল এ মতেরই ধারক। সুষ্পষ্ট ও সন্দেহাতীত অর্থ সংবলিত কুরআনশরীফের আয়াত ও হাদিসসমূহ থেকেও এ আকিদা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়। একাদশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ আশ শায়খ মুহাক্বিক আল্লামা শেখ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী আলাইহির রহমত (বেলাদত ৯৫৮ হিজরি, ওফাত ১০৫২ হিজরি) তদীয় مدارج النبوة ‘মাদারিজুন নবুয়ত’ কিতাবের প্রথম জিলদের ১৯০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন-


تحقیق آنست کہ محمول است برقصۂ معراج گفت بندۂ مسکین ثبتہ اللہ فی مقام الصدق والیقین کہ اشارت قول سبحانہ لنريه من اياتنا بمعراج است یعنی مسجد اقصی بروتا ازانجا بسموات بردہ آیات را بنماید چہ ارادت آیات وظھور غایت کرامات ومعجزات در سموات بود ومقتصر بنود برانچہ واقع شدہ در مسجد اقصی وبرون مسجد اقصی مبداء آنست در ایجہت ذکرکرد مسجد اقصی را ودر واقع اگردر منام می بود استبعاد نمیکردند آنرا کفار ودرفتنہ نمی افتادند ضعفای مومنین ونیز وقوع وقائع وقضایا خارج از حصر واحصا غیر متعارف ست در نوم- 


ভাবার্থ: মিসকীন বান্দা (গ্রন্থকার মুহাক্বিক শেখ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী আলাইহির রহমত) বলেন- আল্লাহ সুবহানাহু ও তা’য়ালার নূরানী ফরমান- لنريه من ايتنا ‘যাতে আমি তাঁকে আমার কিছু নিদর্শন দেখাই।’ এ আয়াতে কারিমার দ্বারা মি’রাজের রাতের প্রতিই ইঙ্গিত করা হয়েছে। মুদ্দাকথা হলো এই যে, মসজিদে আকসা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়, এমনকী তথা হতে আকাশম-লে নিয়ে গিয়ে সকল নিদর্শনসমূহকে দেখানো হয়। কারণ নিদর্শনসমূহকে প্রদর্শিত করা এবং চুড়ান্ত অলৌকিকত্ব ও কারামতকে প্রকাশিত করা আকাশম-লে হয়েছিল এবং মসজিদে আকসায় যা কিছু ঘটেছিল এর উপরই কেবল সীমাবদ্ধ ছিল না। মসজিদে আকসা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া, উহা এ মি’রাজের প্রারম্ভিক স্থান ছিল। সে হিসেবে কালামেপাকে মসজিদে আকসাকে উল্লেখ করা হয়েছে। অপরদিকে ঘটনা যদি স্বপ্নযোগে হতো তো কাফেররা এ মি’রাজকে অসম্ভব বলে ধারণা করত না এবং দূর্বলমনা ঈমানদারগণ বিভ্রান্তির মধ্যে পতিত হতো না। মুফতিয়ে বাগদাদ আল্লামা সৈয়দ মাহমুদ আলুসি হানাফি বাগদাদী আলাইহির রহমত (ওফাত ১২৭০ হিজরি) তদীয় তাফসিরে روح المعانى ‘রুহুল মা’য়ানী’ নামক কিতাবের পঞ্চম জিল্দ (১৫ পারা বৈরুত ছাপা) ১০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-


ذكر العلائى فى تفسيره انه كان للنبى عليه الصلوة والسلام ليلة الاسراء خمسة مراكب الاول البراق الى بيت المقدس الثانى المعراج منه الى السماء الدنيا الثالث اجنحة الملائكة منها الى السماء السابعة الرابع جناح جبريل عليه السلام منها الى سدرة المنتهى الخامس الرفرف منها الى قاب قوسين- 


ভাবার্থ: আল্লামা আলাঈ আলাইহির রহমত স্বীয় তাফসিরে উল্লেখ করেছেন, নিঃসন্দেহে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য ইসরার রজনীতে পাঁচ প্রকার বাহন ছিল। প্রথমত: বোরাক, তা দ্বারা বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত গমন। দ্বিতীয়ত: তথা হতে (বায়তুল মুকাদ্দাস) দুনিয়ার আসমান পর্যন্ত ঊর্ধ্বারোহন। তৃতীয়ত: তথা হতে (প্রথম আসমান) সাত আসমান পর্যন্ত ফেরেশতাগণের ডানা দ্বারা। চতুর্থত: তথা হতে সিদরাতুল মুন্তাহা পর্যন্ত হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালামের ডানা দ্বারা। পঞ্চমত: তথা হতে قاب قوسين কা’বা কাউসাইন পর্যন্ত রফরফ দ্বারা। আল্লামা আলুসি বাগদাদী আলাইহির রহমত উক্ত কিতাবের ১০ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ করেছেন-- 


وذكر مولانا عبد الرحمن الدشتى ثم الجامى ان المعراج الى العرش بالروح والجسد والى ما وراء ذلك بالروح فقط- 


অর্থাৎ ‘মাওলানা আব্দুর রহমান দাশতী ও আল্লামা মুল্লা জামি আলাইহির রহমত তাঁরা উভয়ে উল্লেখ করেছেন, নূরনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মি’রাজশরীফ হয়েছে, স্বশরিরে রূহ মোবারক ও শরির মোবারক উভয়টি সহকারে আরশে আজিম পর্যন্ত। অপরদিকে আরশে আজিমের উপরে শুধুমাত্র রূহানি মি’রাজ হয়েছিল।’ অতঃপর তিনি আরো উল্লেখ করেন-


ولم اقف على مسند له من الاثار وكانه لاحظ ان العروج فوق العرش بالجسد يستدعى مكانا- وقد تقرر عند الحكماء ان ما وراء العرش لا خلا ولاملاوبه تنهى الامكته وتنقطع الجهات- 


ভাবার্থ: আছার (হাদিসের একটা প্রকার) থেকে এ প্রসঙ্গে কোন সনদ বা সূত্র আছে বলে আমি অবগত নই। আর শারিরিকভাবে বা স্বশরিরে আরশের উপরে ঊর্ধ্বারোহন হওয়ার মত সেখানে কোন অংশ নেই। কেননা আরশের উপরে স্বশরিরে ঊর্ধ্বারোহনের জন্য সেখানে মাকান বা স্থানের দাবি জরুরি হয়ে পড়ে। হুকামা বা বিজ্ঞজনের বক্তব্য হচ্ছে, আরশ ব্যতীত (আরশের উপরে) এমন এক অবস্থা যা খালিও নয় এবং পরিপূর্ণও নয়, বরং এখান হলো মাকানের শেষ প্রান্ত এবং এখানে দিক বলতে কিছুই নেই।’ ফলকথা আরশের উপরের এমন এক অবস্থা যা খালিও নয় এবং ভরাও নয়। যেখানে উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম বলতে কিছুই নেই। এখানে হলো মাকানের শেষ প্রান্ত। সুতরাং আরশের উপরে স্বশরিরে মি’রাজ বা ঊর্ধ্বারোহণ সম্ভবপর নয়। এজন্য বলা হয়েছে, আরশের উপরের মি’রাজ হলো হাবিবে খোদার রূহ মোবারকের মি’রাজ। উপরে দলিলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে-


১. নূরনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মি’রাজশরীফ জাগ্রত অবস্থায় শরির মোবারক ও রূহ মোবারক উভয়টি সহকারে সংঘটিত হয়েছে আরশ পর্যন্ত।


২. মি’রাজশরীফের প্রথম স্তর মসজিদে আকসা বা বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত (বোরাক দ্বারা গমন) কুরআনশরীফের কেতয়ী আয়াতে কারিমা দ্বারা প্রমাণিত।


৩. মি’রাজশরীফের দ্বিতীয় স্তর বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে সিদরাতুল মুন্তাহা পর্যন্ত বোরাক দ্বারা প্রথম আসমান মশহুর হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।ফেরেশতাগণের ডানার দ্বারা সপ্তম আকাশ পর্যন্ত এবং তথা হতে জিব্রাঈল আলাইহিস সালামের ডানা দ্বারা সিদরাতুল মুন্তাহা পর্যন্ত।


৪. মি’রাজশরীফের তৃতীয় স্তর হলো সিদরাতুল মুন্তাহা থেকে আরশ বা কা’বা কাউসাইন পর্যন্ত রফরফ দ্বারা ভ্রমণ খবরে ওয়াহিদ দ্বারা প্রমাণিত।


৫. মি’রাজশরীফের চতুর্থ স্তর হলো আরশের উপরে শুধুমাত্র রূহ মোবারক এর সফর। কারণ আরশ ব্যতীত, আরশের উপর-


(لا خلا ولاملاوبه تنتهى الامكنة وتنقطع الحهات- روح المعاننى) 


এর এমন এক অবস্থা খালিও নেই, ভরাও নেই, মাকানের শেষপ্রান্ত যেখানে দিকসমূহ কর্তিত। ফলকথা হলো উত্তর দক্ষিণ পূর্ব ও পশ্চিম বলতে কোন দিকই নেই এবং খালিও নয় পরিপূর্ণও নয়। অর্থাৎ কোন মাকান নেই। মি’রাজশরীফের চতুর্থ স্তর, আরশের উপরের যে তত্ত্ব দেয়া হয়েছে তা আল্লামা আলুসি বাগদাদী, মাওলানা আব্দুর রহমান দাশতী ও মুল্লা জামি আলাইহিমুর রহমত তাঁদের তাহকিকাতের আলোকে দেয়া হয়েছে।

শুক্রবার, ৫ মার্চ, ২০২১

        ◑☞ মুহাব্বতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম 

রাসুলে পাক (ﷺ) এর নাম শুনে মহব্বতে যারা আঙ্গুলে চুমু খেয়ে চোখে মালিশ করবে তাদের প্রতি রাসুলে পাক(ﷺ) এর শুভ সংবাদ-

           রাসুল (ﷺ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,


روى عن النبى صلى الله عليه وسلم انه قال من سمع اسمى فى الاذان ووضع ابهامين على عينيه فانا طالبه فى صفوف القيامة وقئده الى الخنة (صلوة مسعودى ٢)


অর্থ:- যে উম্মত আজানে আমার নাম শুনবে অতঃপর আঙ্গুলদ্বয় চোখের মধ্যে রাখবে আমি তাকে কিয়ামতের কাতার থেকে তালাশ করে জান্নাতে নিয়ে যাব। 

(সালাতে মাসউদি ২য় খন্ড)

ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম

 🌼 পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেন আমরা পালন করি🌼 🌸 রাসূল (ﷺ) মিলাদুন্নবী (ﷺ) পালন করার ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন...